জাতীয়

বর্জ্য নীতিমালায় ১৫ সুপারিশ অন্তর্ভুক্তির দাবি

ঢাকা, ১ আগস্ট – পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে বর্জ্য নীতিমালায় ১৫টি সুপারিশ অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) ও তার কনসোর্টিয়াম সদস্য সংস্থা বারসিক, কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) ও ইনসাইটস-এর নেতৃবৃন্দ এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

একই সঙ্গে বর্জ্য নীতিমালা-২০২১ বাস্তবায়নে সঠিক গাইড লাইন প্রণয়ন, নোটিশ জারি ও কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার দাবিও জানানো হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দূষণমুক্ত ঢাকা সিটির স্বপ্ন বাস্তবায়নে ডিএসকে ও তার কনসোর্টিয়াম সদস্য সংস্থা বারসিক, কাপ ও ইনসাইটস কাজ করছে। ইউএসএইড সমর্থিত প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস (পার) কর্মসূচির আওতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় ‘ঢাকা সিটিজেন্স অ্যাডভোকেসি কোলাবোরেশন এগেইনস্ট পোলিউটিং এনভায়রনমেন্ট (ঢাকা কলিং)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক সুশাসন ও নাগরিক অংশীদারত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুর মোল্লার বস্তি ও কড়াইল বস্তি এবং দক্ষিণ সিটির হাজারীবাগ বৌ-বাজার ও বালুরমাঠ বস্তিতে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ডিএসকে ওই কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য বস্তিভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী পার্টনার এবং কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর অ্যাডভোকেসি পার্টনার।

রোববার (৩১ জুলাই) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এই সুপারিশমালা তুলে ধরেন ওই চার সংগঠনের নেতারা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলিং প্রকল্প ও ডিএসকের কনসোর্টিয়াম সমন্বয়কারী সানজিদা জাহান আশরাফি।

অনুষ্ঠানে কাপের চেয়ারপারসন এবং ডিএসকে নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও গবেষক ড. তারিক বিন ইউসুফ, উত্তর সিটির ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার মো. তাইজুল ইসলাম চৌধুরী, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী, আমেনা বেগম, কাপের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুল হক প্রমুখ। এসময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সিবিও ও ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সুপারিশগুলো হল- কঠিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ এ লাল অথবা কমলা-থ শ্রেণিভুক্ত ও বর্জ্য সংগ্রহ-পরিবহন কার্যক্রম লাল অথবা কমলা শ্রেণিভুক্ত এবং বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা, বিধিমালা-১৯৯৭ এর আওতায় গন্ধ পরিমাপের মানমাত্রা নির্ধারণ, পরিবহন বর্জ্য পৃথকীকরণ এবং পরিবহনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্য বিমা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের টয়লেট এবং পানি সরবরাহের বিষয়টি সম্পৃক্ত করা, শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি করপোরেশনের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা ও কঠিন বর্জ্যর জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে শহরের প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা, কঠিন বর্জ্য হ্রাস করার দিকে জোর দেওয়া এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরকরণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এছাড়াও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আচরণগত পরিবর্তন আনয়নে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ, সড়কের পাশে এবং জলাশয়ে বর্জ্য ফেলা রোধে কঠোর নজরদারী, প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ময়লার বিল কমানো ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে বিনামূলে ময়লা ফেলার অনুমোদন দেওয়া, বর্জ্য সংগ্রহের সময়, প্রয়োজনীয় জনবল, প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অবকাঠামোর বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান, নিয়োজিত ঠিকাদারদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা ও কার্যক্রম সম্পকে নগরবাসীর অভিযোগ ন্যূনতম কোটায় নামিয়ে আনা এবং নিষ্পত্তি করা, জনস্বার্থে রাতের বেলায় বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া।

এসব সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২১ বাস্তবায়নে গাইড লাইন প্রণয়ন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন পরিচালনা সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগরের সব স্তরের অংশীজনের অংশগ্রহণে উৎস থেকে বিভাজন, মৌলনীতি অনুসরণ এবং বিধি বাস্তবায়নে নজরদারি ও পরিবীক্ষণ বৃদ্ধির আহ্বান জানান বক্তরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্জ্য এখন আর বর্জ্য নয়, এটা মহামূল্যবান সম্পদ। বড় ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা যত উন্নত হচ্ছি ততই বর্জ্যর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটার ৪৯ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও উত্তরের মেয়রের নেতৃত্ব আধুনিক মানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নান্দনিক সৌন্দর্য উপহার দিয়েছি। এশিয়ার চমৎকার সিটি হলো ভারতের ইন্দোর। আমরা তাদের সঙ্গে মানেজমেন্ট বিষয়ে বৈঠক করেছি।

তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে। প্রতিদিন সেখান থেকে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও চায়না সিএসসি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রতিদিন ২৫০০ থেকে ২৭০০ টন বর্জ্য উৎপাদন করি। প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টন বর্জ্যে ঘাটতি আছি। তারপর চুক্তি করেছে। আগামীতে আমরা সরাসরি বাসা থেকে ইনটেক ১০০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ করবো। তাই সক্ষমতার সঙ্গে কাজের গতি বাড়াতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন, বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে দেখলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। পচনশীল ও কঠিন বজ্র্য শুরু থেকে আলাদা করতে হবে। কারণ শুরু থেকে আলাদা করতে পারলে সময়ের পাশাপাশি রিসাইকিলিং খরচও কম হবে। পচনশীল বর্জ্য থেকে সার ও বিদুৎ উংপাদন করা যাবে। তাই আমাদের সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া দরকার।

সূত্র: জাগোনিউজ
আইএ/ ১ আগস্ট ২০২২

Back to top button