ঢাকা

দুদক থেকে বাঁচতে ২১ দিনের ছুটি নিয়ে আঠারো মাস আত্মগোপনে

১ আগস্ট – অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তলব করা হয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজাইন) মো. শহীদুজ্জামানকে। অভিযোগ তদন্তাধীন অবস্থায়ই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ২১ দিনের ছুটি নিয়ে গত বছরের জানুয়ারি মাসে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু সেই ২১ দিন শেষ হয়নি দেড় বছরেও।

এদিকে চাকরির শর্ত লঙ্ঘন করায় তাকে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে পদাবনতি করে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) করা হয়েছে। শুধু পদাবনতিই নয়; তার এহেন কর্মকাণ্ডকে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’ আখ্যা দিয়ে তাকে সাময়িক

বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্মক্ষেত্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গতকাল রবিবার পর্যন্ত কাজে ফেরেননি মো. শহীদুজ্জামান। সহকর্মীদের অভিযোগ, দুর্নীতির অভিযোগ আসায় দুদকের হাত থেকে বাঁচতে আমেরিকায় পালিয়ে আছেন তিনি। ওই কর্মকর্তার দেশে ফেরা প্রায় অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন বেবিচক কর্মকর্তারা।

কর্মস্থলে ফিরতে এবং না ফিরলে প্রশাসনিক কী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা জানিয়ে সর্বশেষ গত বুধবার মো. শহীদুজ্জামানের সম্ভাব্য ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

ওই চিঠিতে উল্লিখিত তথ্যের বরাত দিয়ে বেবিচকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, মো. শহীদুজ্জামান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ২১ দিনের ছুটির অনুমোদন নিয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যান। কিন্তু ছুটি শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন না করে বিনানুমতিতে বিদেশে অবস্থান করায় বেবিচকের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০১১ অনুযায়ী অনুপস্থিতির তারিখ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগ এনে গত বছরের ১৩ এপ্রিল একটি বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। সশরীরে উপস্থিত হয়ে মামলার শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় মো. শহীদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে চাকরির প্রবিধি অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করে নিম্নপদ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে ১ম গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে স্থায়ীভাবে অবনমিতকরণ গুরুদণ্ড আরোপ করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এক অফিস আদেশ জারি করা হয়। অদ্যাবধি কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় বেবিচক কর্তৃপক্ষের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী ‘পলায়ন’-এর পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তিনি। একই বিধিমালার বিধি অনুযায়ী কেন তাকে ‘চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ’ গুরুদণ্ড আরোপ করা হবে না অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না তা অভিযোগনামা প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সরাসরি লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদেশে।

অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে মো. শহীদুজ্জামানকে ডেকে পাঠায় দুদক। চিঠিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বেবিচকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো দুদকের ওই চিঠিতে মো. শহীদুজ্জামানকে ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। তদন্তে আনীত অভিযোগে সত্যতা পায় দুদক।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, মো. শহীদুজ্জামানকে কর্মস্থলে ফিরতে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে তিনি কাজে না ফিরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র:আমাদরসময়
আইএ/ ১ আগস্ট ২০২২

Back to top button