‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞায় ৫০ বিশিষ্টজনের উদ্বেগ
ঢাকা, ৩০ জুলাই – ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পঞ্চাশজন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার তাদের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন টকশোতে যাতে কেউ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করেন, সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে গত ১৯ জুলাই। সার্কুলারটি সব টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দটি প্রচার করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইসঙ্গে এটি উচ্চ আদালতের মতামত অবমাননার সামিলও। তাই টেলিভিশন টকশোগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যাতে শব্দটি ব্যবহার না করেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারে।
পঞ্চাশ নাগরিকের বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় গভীর ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়, ওই সার্কুলারটি মূলত একটি বিশেষ সংস্থার পরিপত্রকে ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। কোন শব্দটি সংবিধান সম্মত কিংবা অসাংবিধানিক, তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার কোনো বিশেষ সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের নেই। এটি চরম অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে, যা মোটেই কাম্য নয়, আইনসম্মতও নয়।
আরও বলা হয়, ক্ষমতাসীন সরকারের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৮(ক) ধারায় একাধিকবার আদিবাসী শব্দটি স্পস্ট করে ব্যবহার করা হয়েছে।
সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধানের কোনো ধারা বা বিষয় নিয়ে কোনো বিতর্ক বা মতান্তর দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা একমাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টই দিতে পারবে, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। আর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেরই এক রায়ে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারা হলেন, মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী, ও এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখরুজ্জামান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী চাকমা রানী ও উপদেষ্টা চাকমা সার্কেল চিফ রানী ইয়েন ইয়েন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা প্রমুখ।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/৩০ জুলাই ২০২২