জাতীয়

পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে ঢাকায়, বড় পরিবার সিলেটে

ঢাকা, ২৯ জুলাই – দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠি ছাড়া দেশের সব জেলায় বেড়েছে জনসংখ্যা। জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস ঢাকায়। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলার জনসংখ্যা বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্বের হিসাবেও ঢাকা জেলা প্রথম। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলা।

পরিবারে সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যার হিসাবে তিনটি জেলাই সিলেট বিভাগের। সেগুলো হলো যথাক্রমে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ। অন্যদিকে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা হলেও পরিবারের আকার কমেছে এই জেলায়। আগে যেখানে ছিল ৪ দশমিক ৩২ জন, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৫ জনে।

সবচেয়ে কম মানুষের বাস বান্দরবানে। পার্বত্য জেলাটির জনসংখ্যা চার লাখ ৮১ হাজার ১০৯ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৭ জনের বসবাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে কম আরেক পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস ১০৬ জনের। দেশে তালাকপ্রাপ্ত পুরুষের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্নতায় শীর্ষে খুলনা বিভাগ। আর নারীর ক্ষেত্রে তালাকপ্রাপ্ত বিভাগের শীর্ষে রাজশাহী। আর সর্বনিম্ন বরিশাল বিভাগ।

দাম্পত্য বিচ্ছিন্নতায় পুরুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগ আর সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্নতায় নারীর ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগ আর সর্বনিম্ন কম বরিশাল বিভাগে।

গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর—বিবিএসের প্রকাশিত সবশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএস বলছে, জনশুমারির এই প্রতিবেদনটি প্রাথমিক। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মাধ্যমে শুমারি পরবর্তী যাচাই জরিপ করা হবে। এরপর আগামী তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

৫ জেলায় জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি:

ঢাকা জেলায় এখন জনসংখ্যা এক কোটি ৪৭ লাখ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কুমিল্লায় বসবাস করে ৬২ লাখ ১২ হাজার মানুষ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা গাজীপুরে জনসংখ্যা ৫২ লাখ ৬৩ হাজার। আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা টাঙ্গাইলের জনসংখ্যা ৪০ লাখ ৩৭ হাজার।

ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি পাঁচ জেলায়:

জনসংখ্যার ঘনত্বও সবচেয়ে বেশী ঢাকা জেলায়। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে দশ হাজার ৬৭ জন মানুষ বসবাস করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা নারায়ণগঞ্জে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে পাঁচ হাজার ৭১২ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা গাজীপুর জেলায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে দুই হাজার ৯৭৪ জন। আর চতুর্থ স্থানে থাকা নরসিংদীতে দুই হাজার ২৪৭ জন এবং পঞ্চম স্থানে থাকা কুমিল্লায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ৯৭৪ জন মানুষ বসবাস করে।

বেশি মানুষ ঢাকায়, কম বান্দরবানে:

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা এখন ঢাকা জেলায়। এই জেলায় বাস করে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ। তবে ঢাকায় পরিবারের আকার কমেছে। এখন ঢাকায় একটি পরিবারের আকার ৩ দশমিক ৬৫ জন। যা আগে ছিল ৪ দশমিক ৩২ জনে।

এদিকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বান্দরবান জেলায় চার লাখ ৮১ হাজার ১০৯ জন। পার্বত্য এই জেলাটিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৭ জনের বসবাস। জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে কম রাঙামাটিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৬ জন।

পরিবারে সদস্য বেশি সিলেটে, কম জয়পুরহাটে:

পরিবারে সদস্যসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি এখন সিলেট জেলায়। এখানে গড়ে প্রতিটি পরিবারে ৫ দশমিক ১৬ জন। অথচ জাতীয়ভাবে খানার আকার ৪ জন। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশির দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ৫ দশমিক ১০ জন, হবিগঞ্জ চার দশমিক ৮০ জন।

এদিকে পরিবারের আকার সবচেয়ে কম জয়পুরহাটে তিন দশমিক ৫৪ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে মেহেরপুর ৩ দশমিক ৬১ জন। বগুড়া ৩ দশমিক ৬৪ জন।

ঝালকাঠিতে কমেছে মানুষের সংখ্যা:

জনশুমারির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব জেলায় মানুষ বাড়লেও কমেছে শুধু ঝালকাঠিতে। এই জেলায় গত ১১ বছরে মানুষের সংখ্যা কমেছে। ঝালকাঠিতে এখন মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৬১ হাজার ১৬১ জন। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এই জেলায় মানুষ ছিল ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৬ জন।

স্বাক্ষরতার হারে শীর্ষে ঢাকা বিভাগ, সর্বনিম্নে ময়মনসিংহ বিভাগ:

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, স্বাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৭৮.০৯ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যেও ঢাকা বিভাগেই ৮০.০৮ শতাংশ। তবে নারীদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার বেশি বরিশাল বিভাগে ৭৬.৭১ শতাংশ।

সাক্ষরতার হার সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭.০৯ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এ হার ময়মনসিংহ বিভাগেই ৬৮.৭৭ শতাংশ। আর মহিলাদের মধ্যে এই বিভাগেই সর্বনিম্ন ৬৫.৪৯ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানটি ৭ বছরের উপরের জনগোষ্ঠীকে হিসাব করে করা হয়েছে।

তালাকপ্রাপ্ত ও দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন:

দেশে তালাকপ্রাপ্ত পুরুষের সংখ্যা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন পুরুষের সংখ্যা শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ। দেশে তালাকপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। আর দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন নারীর সংখ্যা শূন্য দশমিক ৫১। তালাকপ্রাপ্ত পুরুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ রাজশাহী বিভাগে আর সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ২ শতাংশ রংপুর বিভাগে। আর দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন সবচেয়ে বেশি পুরুষ খুলনা বিভাগে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ঢাকা বিভাগে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ ঢাকা বিভাগে।

এদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তালাকপ্রাপ্ত রাজশাহী বিভাগে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন বরিশাল বিভাগে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন সবচেয়ে বেশি মহিলা শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ খুলনা বিভাগে এবং সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ বরিশাল বিভাগে।

প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য:

এদিকে তাদের বাড়ি বা বাসায় জনশুমারির দায়িত্বে থাকা কেউ যাননি বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছেও এ ধরণের অভিযোগ আছে। আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাছাই-বাছাই করেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে, তার পরিবারের কোনো সদস্য থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে কিন্তু বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। এমনকি উনার তথ্যও নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জনশুমারি বড় একটি কাজ। সবার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। এর পরেও এবারের শুমারি অনেকটাই সঠিক হয়েছে বলে মনে করি। তবে কোনো কারণে হয়তবা দু-একজন বাদ পড়তে পারে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। পল্লী এলাকায় মোট জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন।

দেশের মোট জনসংখ্যা এক তৃতীয়াংশ নাগরিক এখন শহরের বাসিন্দা। শহর এলাকার মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন। গ্রামাঞ্চলে থাকেন দুই তৃতীয়াংশ। শহর ও পল্লীভিত্তিক জনসংখ্যার হার যথাক্রমে ৩১.৫১ শতাংশ ও ৬৮.৪৯ শতাংশ। শহর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৯ জন বসবাস করেন ঢাকা বিভাগে। আর সিলেট বিভাগের শহর এলাকায় সর্বনিম্ন ২০ লাখ ৬৫ হাজার ১২৩ জন।

দেশের আট বিভাগের মধ্যে গ্রাম এলাকায় সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ঢাকা বিভাগে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১৬ জন। আর সর্বনিম্ন বরিশাল বিভাগে ৬৮ লাখ ৯ হাজার ৮৪৪ জন।

সূত্র: ঢাকাটাইমস
এম ইউ/২৯ জুলাই ২০২২

Back to top button