জাতীয়

পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে তৎপর দুদক

সৈয়দ ঋয়াদ

ঢাকা, ২৪ জুলাই – দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক ক্যালেঙ্কারির মূল হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি। দেয়া হয়েছে চিঠি।

চলতি বছরের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট(ইডি) গ্রেপ্তার করে পি কে হালদারকে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় তার আরও পাঁচ সহযোগীকে।

পি কে হালদার ও তার সহযোগিদের বিচারের মুখোমুখি করতে প্রসিকিউশনকে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানা যায়। ইতোমধ্যে দুদকের জালে আটকা পড়েছেন পি কের ১৩ সহযোগী। পি কে সিন্ডিকেটের সবাইকে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও দুদক সূত্রে জানা যায়। একইসঙ্গে পি কের অন্যান সব সহযোগিদের শনাক্ত করতে কাজ করছে সংস্থাটি। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করারও চিন্তা চলছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কারা পি কের সহযোগী তাদের বিষয়েও পৃথক অনুসন্ধান চলছে।

জানা যায়, ভারতে শিবশঙ্কর ছদ্মনামে নাগরিকত্ব নিয়ে বেশ ভালই ছিলেন পি কে হালদার। সমস্যা বাধিয়েছে তার দুর্নীতি। সে দেশের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে পি কের ওপর নজরদারি করে আসছিল। দুদকের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে অভিযোগ আসে তাতে পি কে ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা লোপাটের উল্লেখ রয়েছে। পিপলস লিজিংসহ চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরষ্পর যোগসাজশে তিনি এই টাকা লুটে নেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশের বাইরে এই টাকা পাচারের পর তিনি বেশ আয়েশেই ছিলেন। প্রথমে কানাডা। পরে দুবাই। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে ভারতে আশ্রয় নেন। পরিবর্তন করেন নাম। নতুন নামে তিনি অনেক সম্পদও গড়েছেন সে দেশে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জালিয়াতি করতে গিয়ে পি কে হালদারসহ তার পাঁচ সহকারি ধরা পরেছেন ভারতে অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের (ইডি) হাতে। তার বিরুদ্ধে দেড়শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলাসহ আর্থিক খাতের লোপাটের ঘটনায় আরও এক ডজন মামলা রয়েছে দুদকের কাছে। উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম দীর্ঘদিন ধরে পি কে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে আসছেন। অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ তদারক করছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

সূত্র জানায়, দুদকের করা মামলার আসামি হিসেবে পি কে হালদার ও তার সহযোগিদের আইনের হাতে সোপর্দ করার জন্য সংস্থাটি কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সহযোগিতে চেয়েছে দুদক।

জানা যায়, গত সপ্তাহে দুদকের মহাপরিচালক সৈয়দ মাহবুব হোসেনের স্বাক্ষরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয়া হয়। তাতে কোন প্রক্রিয়ায় পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করা হয়। চিঠিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা দুদকের অনুসন্ধান-তদন্ত ও মামলার তথ্য তুলে ধরা হয় বলে জানা যায়।

পি কে হালদার পলাতক ছিলেন দীর্ঘ সময়। তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থাও সন্দিহান ছিলেন তার অবস্থান সম্পর্কে। ভারতে গ্রেপ্তারের পর সেই রহস্যের জাল কিছুটা হলেও ছেদ পড়েছে। এরই মধ্যে তাকে দেশে ফেরাতে সব ধরণের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি পি কে হালদারকে ফেরাতে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা থেকে সংস্থাটির পরিচালক আক্তার হোসেন আজাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি স্বরাষ্ঠ্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে দুদক।

স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের দেওয়া ওই চিঠিতে কোন প্রক্রিয়ায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের ফেরত আনা হবে সে বিষেয়ে কিছু জানা যায়নি। পি কের মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকটাইমসকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তি বা বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে সেভাবেও ফেরানো হতে পারে। তবে তাকে ফেরাতে সেই প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ ‘ক্রস বর্ডার ইম্পপ্লিকেশনস’ এই ক্ষেত্রে একটা বড় উপায় বলে তিনি মনে করেন। এই ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগীতা গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।

পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুদকের দেওয়া চিটির বিষয়ে দুদক কমিশনার জহুরুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা পি কে হালদারকে ফেরত আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। স্বরাষ্ট্র পররাষ্ট্রসহ সব দপ্তরে চিঠি দিচ্ছি। আমরা আশা করছি তাকে খুব শিগগিরই ফেরত পাবো।’

‘ভারতে পি কে হালদারে বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা হয়েছে সেটা যে ধরণের সাজা বিধান আছে সেদেশের আইনে, তাকে বাংলাদেশে ফেরত এনেও সেই শান্তি দেওয়ার সুযোগ আছে। পি কে হলদারকে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক কাজ করছে। আনার আগ পর্যন্ত সেই কাজ অব্যাহত থাকবে’—যোগ করেন তিনি।

পি কে হালদারকে দেশ ফেরাতে দুদকের চেষ্টা অব্যাহত আছে জানিয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা সব ধরেণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক, বিভিন্ন দপ্তরের চিঠি দেয়ার কাজ অব্যাহত আছে। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় তাকে দেশে ফেরত আনতে কাজ করছে দুদক।’

পি কে হালদার গ্রেপ্তারে পরই অবশ্য দুদকের ডাকে সাড়া দিয়ে গত ১৯ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করে। ওই বৈঠকে প্রয়োজনে আন্ত্রমন্ত্রণালয়ের একটি টিম ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

পি কে বিরুদ্ধে যত মামলা
পি কে হালদারে বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৯টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। আরো দুটি মামলার রিপোর্ট সাবমিশন করা হযেছে বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেন দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এসব মামলায় পি কে সঙ্গে তার সহযোগীদের আসামী করা হয়েছে। এছাড়া পি কে সংশ্লিষ্ট ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া পি কের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন শতাধিক ব্যক্তি দুদকের নজরধারিতে রয়েছে বলে জানায় দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০২০ সালে ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন ও আত্মসাতের পি কে হালদারে বিরুদ্ধে প্রথম মামরা করে দুদক। একই বছরে ভুয়া পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা হয়।

এছাড়া দশটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভুয়া ঋণপত্র দেখিয়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুদক ১০টি মামলা অনুমোদন করে দুদক। অনুমোদিত এই ১০ মামলার মধ্যে থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৪৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে প্রথমে ছয়টি মামলা রুজু করা হয় ও পরে ৩০৬ কোটি টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে আরও চারটি মামলা রজু করা হয় ওই একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। আর পি কে ও তার সহোযগীদের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা জব্দ করেছে দুদক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কারা পি কের সহযোগী
পি কে হালদারের অর্থ ক্যালেঙ্কারির ও অর্থ পাচারে তার সঙ্গে মূল দুষ্কৃতিকারী বা পৃষ্ঠপোষক কারা ছিল এখন চলছে সেই আলোচনা। প্রশ্ন উঠেছে, পি কে হালদারের অর্থ পাচারের পেছনে বড় কোনো রাঘব বোয়াল জড়িত? দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজিরবিহীন এই অর্থ লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক কিছু কর্মকর্তার নামও এসেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। গত ২৯ মার্চ এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পি কে সিন্ডিকেটের ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের মধ্যে ১১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। রাশেদুল হক জবানিবন্দিতে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর পর নাম আসা ব্যক্তিরা ফের দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন বলে মনে করছি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

পি কের বান্ধবী কারা জড়িত
পি কের সঙ্গে হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম ও ভাগ বাটোয়ারায় সড়াসরি জড়িত এমন দুই ডজন নারীর নাম এসেছে দুদক ও বাংলাদেশ ফাইন্যাস্মিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ) তদন্তে। তবে তার কথিত ৮০ জন বান্দবীর কথা উঠে এসেছে গণমাধ্যমের খবরে। অর্থিক অনিয়ম জাল জালিয়াতিতে তিনি বান্ধবীদেরকে ব্যবহার করার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

ধানমন্ডি ১০ নম্বর রোডের তিন হাজার বর্গফুটের যে ফ্ল্যাট অবন্তিকা থাকতেন সেই ফ্ল্যাটের মূল্য নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেন পি কে হালদার। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। একই বছরের ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার করা করা হয় পি কের আরেক বান্ধবী ইন্টারন্যাশনার লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাইকে। শিমু রয়, পূর্ণিমা রানী, অবনিতা, সুপ্তি চৌধুরীর, শাহনাজ, সুস্মিতা, অনিন্দিতা মৃধা, পাপিয়া আক্তার, শুভ্রা রানী, লামিয়া শহাারিন ও সজিয়া রহমানসহ বেশ কয়েকজন নারীর ব্যাংক হিসাবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। আবার তাদরে মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন পি কে।

চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার কোটি লোপাট
পি কে হালদার নিজের ছোট ক্যারিয়ারে ৮ থেকে ৯ বছরে অভিজ্ঞতাকে যাদুমন্ত্রের মতো কাজে লাগিয়ে ২০০৯ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বনে যান। আর ২০১৫ সালে এনআরবি গ্লোবাল নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপান পরিচালক হন পি কে। ২০০০ থেকে ২০১৯ এই এগারো বছরে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। আর প্রতিটি প্রষ্ঠিানের প্রধানই নিয়োগ হয়েছে তার নিজস্ব লো

এখন পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের কথা বলা হলেও, পি কে ও তার সহযোগীদের দখলে থাকা চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসেবে প্রায় সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বিপুুল অঙকের এই টাকা লোপাটে তিনি গড়েছেন কাগুজে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকও আপত্তি দেখায়নি। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডজন খানেক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেছেন পি কে হালদার।

বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য থেকে জানা যায়, চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার সরিয়েছেন ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কার্যত যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে এর প্রতিটিই এখন ধুকছে অর্থ সংকটে। দেউলিয়া হওয়ার পথে এসব প্রতিষ্ঠান না পারছে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারছে চালাতে।

পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস) থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরান পি কে হালদার চক্র।

পি কে ইস্যুকে কতজন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশে পি কে হালদারের অর্থ পাচারের ১৩জন সহযোগীকে দুদক গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তারা হলেন শংখ বেপারি, পি কে হালদারে বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই, পি কে হালাদারের আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সম্নেট ডিরেক্টরেট (ইডি) হাতে পি কে হালদার ও তার স্ত্রী ও ভাইসহ মোট ছয়জনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে।

ভারতের গ্রেপ্তারের পর
আলোচিত জালিয়াতির এই জালিয়াতির ঘটনায় ভারতে গ্রেপ্তারের পর প্রথম দফায় ১১ দিনে বিচার বিভাগীয় রিমান্ডের পর আরও কয়েক দফা তাদের রিমন্ডা মঞ্জুর করে। ভারতের ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের সাড়ে তিনশ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া পি কে সহযোগীদের ৯২ টি ব্যাংক হিসাব ও অর্ধ শতাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায় সংস্থটি। এছাড়া মালয়শিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও কানাডায় পি কে হালদারে বাড়ি বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে ইডি।

সূত্র : ঢাকাটাইমস
এন এ/ ২৪ জুলাই

Back to top button