ইউরোপ

ইউক্রেন যুদ্ধজয়ে প্রাচীন এক অস্ত্রের ওপর বাজি ধরেছেন পুতিন

মস্কো, ২৩ জুলাই – ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেল। এর মধ্যে দেশটি কিছু অঞ্চলের দখল নিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। এতে বিস্তর মূল্যও দিতে হয়েছে রাশিয়াকে। তবে রাশিয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে চাপ তৈরি করতে চেয়েছিল তা সফল হয়নি। উল্টো তারাই এখন চাপে পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এক ‘প্রাচীন অস্ত্র বাজি ধরে’ এটি সম্ভব করেছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনও এখন বুঝে গেছেন যে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি যত বেশি হবে, যুদ্ধ যত বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে, জয় হবে রাশিয়ার। একসময় মস্কোতে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করা বার্নসকে গত নভেম্বরে ফের মস্কোতে পাঠান জো বাইডেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, পুতিন যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তা একসময় ব্যর্থ হবে। কিন্তু পাঁচ মাস পর তিনি বলছেন ভিন্ন কথা। বার্নস বলছেন, পুতিন এখন আরও আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করছেন, ইউক্রেনের পাশে থাকার যে দৃঢ় সংকল্প পশ্চিমাদের যুদ্ধের শুরুতে ছিল তা এখন অনেকটাই কমে গেছে। এখন তিনি চাইলে ইউক্রেন, পাশাপাশি পুরো ইউরোপকেও পরাস্ত করতে পারেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকেও হারাতে পারেন যেকোনো যুদ্ধে। পুতিন মূলত তার এ অহমিকাকেই বাজি হিসেবে ধরেছেন। আর তার সেই বাজি জয়ের সঠিক পথেই এগোচ্ছে। কারণ তার এ অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করা ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।

রয়টার্স বলছে, যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা ইতালি ও যুক্তরাজ্য পড়েছে চরম রাজনৈতিক সংকটে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে সরব ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতিমধ্যে ক্ষমতা হারিয়েছেন। জার্মানি, হাঙ্গেরিসহ আরও অনেক দেশের জ্বালানি সংকট চাপ বাড়াচ্ছে অর্থনীতিতে। এ বিষয়গুলো রাশিয়ার কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার করছে। সেখানে বলা হচ্ছে, ওইসব ব্যক্তি ও দেশ আসলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেদের পায়েই কুড়াল মেরেছে। তারা মস্কোকে নতজানু করে যে বিজয়োল্লাসের স্বপ্ন দেখছিল তাও ভেস্তে গেছে।

গত ১৮ বছর ধরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সের্গেই লেভরভ গত বুধবার ঘোষণা দেন, ইউক্রেনের দনবাস ছাড়াও রাশিয়ার নজর এখন আরও দূরে। এর পরদিনই গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেনের উত্তর উপকূলীয় এলাকার খেরসনসহ আরও কয়েকটি শহরের দখল নিতে যাচ্ছে রাশিয়া। আর তাহলে ইউক্রেনের মোট ১৮ শতাংশই রাশিয়ার দখলে চলে যাবে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর এর পরিমাণ ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে যেটা দাঁড়াবে ইউক্রেন তার অভ্যন্তর থেকে সহজে আর রাশিয়ায় হামলা চালাতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হবে রাশিয়ার ততই লাভ বলে মনে করছেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক ভøাদিসøাভ জুবোক।

শুধু এখানেই শেষ নয়, পুতিন কিছুদিন আগেই বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণাটি ন্যাটো জোটকে চাপে রাখতে দেওয়া হলেও চাপে পড়েছে ইউরোপের অনেক দেশ। জি-৭ জোটের নেতারা ওই ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাশিয়া বেলারুশে পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ মিসাইল পাঠাতে পারে এমন ঘোষণা দেওয়ায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করতে এবং সংবরণ বজায় রাখতে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/২৩ জুলাই ২০২২

Back to top button