জাতীয়

৩ হাজার বাংলাদেশির জন্য ইতালি যাওয়ার সুযোগ

ফরিদপুর, ২২ জুলাই – বাংলাদেশ থেকে বিমানে লিবিয়া। সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পার হলেই ইতালি। এরপর মাসে লাখ টাকা বেতনে চাকরি। কোনো ঝুঁকি নেই। যারা আগে গেছেন, সবাই ভালো আছেন। দেশে টাকা পাঠিয়ে দালান তুলেছেন- দালালের এমন প্রলোভনে পড়ে ইতালির মোহে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের হাজারো তরুণ ঘর ছেড়েছেন। বাস্তবতা হলো- জনপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করেও ইতালি যাওয়া তো হয়ইনি; বরং মানব পাচারকারীদের নির্যাতন ও সাগরে প্রাণ গেছে শত শত তরুণের।

অবৈধভাবে সাগর পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা মানে মৃত্যুঝুঁকি- আজ শুক্রবার শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে নিরাপদ অভিবাসনবিষয়ক মতবিনিময় সভায় সে কথাই বোঝানো হয় স্থানীয়দের।

স্থানীয় এমপি নাহিম রাজ্জাক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের উপস্থিতিতে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, জনসচেতনতা ছাড়া মানব পাচার বন্ধের উপায় নেই।

তিনি বলেন, এখন থেকে বছরে ৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে ইতালি যেতে পারবেন চাকরি করতে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করে লিবিয়ায় দালালের হাতে কিংবা সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো ও নিখোঁজদের স্বজনরা তাঁদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানান মতবিনিময় সভায়।

অবৈধভাবে ইতালি যেতে বছর তিনেক আগে দেশ ছাড়েন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ লোনসিং গ্রামের কামাল মুন্সি। তিনি এখন নিখোঁজ। ছেলের সন্ধান চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামালের মা নাছিমা আক্তার।

তিনি জানান, তাঁর ছেলে কৃষিকাজ করতেন। বেশি উপার্জনের আশায় সাড়ে ৪ লাখ টাকায় স্থানীয় দালাল হানিফ সরদারের মাধ্যমে লিবিয়া যান। এর পর সেখানে আরেক বাংলাদেশি দালাল হাসানকে ১০ লাখ টাকা দেন ইতালি যেতে। গত ১ জুলাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকায় ওঠেন কামাল। গত ৩ জুলাই দালাল হাসান ফোন করে জানায়, কামাল স্ট্রোক করে মারা গেছেন। দেশে লাশ পাঠাতে টাকা লাগবে।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নাছিমা আক্তারকে আশ্বাস দেন, তাঁর ছেলের সন্ধানে কাজ করবে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, অবৈধ পথে বিদেশ না যেতে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

এ সময় রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা বিপজ্জনক। ভূমধ্যসাগর ও উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে গত বছর ৩ হাজার ২৩১ জন মারা গেছেন। ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি সফরে বাংলাদেশিরা মৌসুমি কাজের কোটা সুবিধা পেয়েছেন। এরপর গত দুই বছরে ১ হাজার ৬০০ জন বৈধভাবে ইতালি গেছেন।

সভায় জানানো হয়, গত জুন পর্যন্ত অবৈধ পথে ২১ হাজার ৮৪৮ অভিবাসী ইতালি প্রবেশ করেন, যা গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। ১৪ হাজার ৭৫৮ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমান, যাদের ৬ হাজার ৫৫৭ জন ইতালিতে এবং ৫ হাজার ৭০ জন গ্রিসে এসেছেন। চলতি বছর ইতালি ২৮ হাজার ৫০৪ অনিয়মিত অভিবাসীকে বৈধতা দিয়েছে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, বিদেশ নেওয়ার কথা বলে দালালরা কাউকে যেন মৃত্যুপথে ঠেলে দিতে না পারে, সে জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২২ জুলাই ২০২২

Back to top button