ব্যবসা

গ্যাস-কয়লা আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে

ঢাকা, ১৫ জুলাই – দেশে জ্বালানি পণ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। জ্বালানি তেল, এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) ও এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) পুরোটাই আমদানি করতে হয়। কয়লারও বড় অংশ আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম, দেশে ডলার সংকট এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

গত এক বছরে বিশ্ববাজারে কয়লা ও খোলাবাজারে (স্পট মার্কেট) এলএনজির দাম লাগামহীন বেড়ে চলেছে। জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসান সামলাতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি আপাতত বন্ধ আছে। ডলার সংকটে ব্যাংকগুলো জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্র খুলতে গড়িমসি করছে। তাই তেল আমদানি নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিশ্নেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম শিগগিরই কমার সম্ভাবনা নেই। অচিরেই দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, কলকারখানাসহ সব খাতই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। দেশে ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস দিয়ে; ৩৪ শতাংশ জ্বালানি তেল ও ৮ শতাংশ কয়লা দিয়ে। পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশই জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। গ্যাসভিত্তিক বাহন বাকিটা।
গ্যাস সংকট :দেশে দৈনিক গ্যাস চাহিদা কমবেশি ৪৫০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা গত মাসেও সরবরাহ করেছে গড়ে ৩১০-৩১৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানি করা গ্যাস (এলএনজি) ছিল ৮০-৮৫ কোটি ঘনফুট। আমদানি করা গ্যাসের একটা অংশ স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি কেনে সরকার। দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাসে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রয়েছে। ফলে এলএনজি সরবরাহ ৩০ কোটি ঘনফুট কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে শিল্প-বিদ্যুৎসহ সব খাতে। সরবরাহ কমায় চলতি মাসে লোডশেডিং শুরু হয় দেশজুড়ে। যদিও চাহিদা কমে যাওয়ায় ঈদের ছুটিতে লোডশেডিং কিছুটা কমেছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে কলকারখানা চালু হলে আবার লোডশেডিং শুরু হবে। এ ছাড়া আগামী কয়েক বছরে প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়েকটি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত মাসেও এলএনজি প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ২৫ ডলারে কেনা হয়েছে খোলাবাজার থেকে। এখন তা ৪০ ডলার। এত বেশি দাম দিয়ে গ্যাস কেনার মতো সামর্থ্য এখন পেট্রোবাংলার নেই। সরকারও অর্থ দিচ্ছে না। ফলে খোলাবাজার থেকে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন দিন দিন কমছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। ফলে শিগগিরই এ খাতে কোনো সুখবর নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দাম বেড়েছে কয়লারও :দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় এবং পটুয়াখালীর পায়রায়। বড়পুকুরিয়ায় দেশের কয়লা ব্যবহূত হয়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। রামপাল, মাতারবাড়ী, চট্টগ্রামের এস আলমসহ আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি বছরেই উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সবই আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। সম্প্রতি কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম না কমলে কয়লার দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইউরোপে কয়লার ব্যবহার বাড়ছে। ফলে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, কয়লার দাম সামনে আরও বাড়তে পারে। ফলে আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কতটা সাশ্রয়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, দেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধানের তেমন উদ্যোগ নেই বললেই চলে। সরকারের ঝোঁক শুধু আমদানির দিকে। দেশের কয়লা তোলার বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৫ জুলাই ২০২২

Back to top button