আইন-আদালত

আদালত প্রাঙ্গণে বসানো হচ্ছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’

কবির হোসেন

ঢাকা, ১৪ জুলাই – পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ছোট্ট একটি ভবনে চৌকি আদালতের বিচারকার্য পরিচালিত হয়। জায়গার অভাবে বিচারপ্রার্থীরা রোদ কিংবা বৃষ্টিতে আদালত ভবনের ভেতরে বসতে পারেন না। এমনকি ভবনের বাইরেও বসা কিংবা দাঁড়ানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বিচারপ্রার্থীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়- কখন কার মামলার ডাক পড়ে। যার ডাক পড়ে তাকে ভিড় ঠেলে এজলাসকক্ষে প্রবেশ করতে হয়।

এমনই নানারকম দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায় দেশের প্রায় প্রতিটি আদালত চত্বরে। সারাদেশের আদালতগুলোয় প্রতিদিন লাখ লাখ মামলার বিচার চলে। এসব মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ আদালতে আসেন। কেউ আসেন সাক্ষী দিতে। কেউ আসেন হাজিরা দিতে। কেউ-বা আসেন মামলার তদবির করতে। আবার বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে সঙ্গ দিতেও আসেন অনেকে। ফলে উচ্চ আদালত থেকে

অধস্তন আদালত সবখানেই বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ আদালত চত্বরে এসব বিচারসংশ্লিষ্ট জনগণের বসার কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ওয়াশ রুম, বিশ্রামাগার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। ফলে আদালতের বারান্দায় অথবা রাস্তার ধারে বসে সময় কাটে বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের। বছরের পর বছর চলে আসছে এই দুর্ভোগ।

বিশেষ করে নারী, শিশু ও সাক্ষীদের এই দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হয়। একজন নারী তার শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এলে সাবলীলভাবে দুধ পান করাতে পারেন না। আবার বিচারপ্রার্থীর পাশাপাশি যারা সাক্ষ্য দিতে আসেন, সেই সাক্ষীদেরও একই দুর্ভোগ বেশ পীড়া দেয়। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একজন সাক্ষী আদালতে আসেন। আর আদালত চত্বরে গিয়ে যখন এমন দুর্ভোগের শিকার হন, তখন সে আর দ্বিতীয়বার আদালতে যেতে চান না। ফলে অবিচারের শিকার হন অনেকেই। আর বিচারপ্রার্থীসহ বিচারসংশ্লিষ্টদের এমন দুর্ভোগ নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মো. হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য একটি শেড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আদালতের সড়ক ভবন চত্বরে এটির নির্মাণকাজ চলছে। পাশাপাশি দেশের অধস্তন আদালতের প্রতিটি চত্বরে এমন শেড (বিশ্রামাগার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এসব শেডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’। ‘ন্যায়কুঞ্জে’ থাকবে বিচারপ্রার্থী জনগণের বসার স্থান, ওয়াশ রুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ছোট্ট একটি স্টেশনারি শপ। এই ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে জেলাভেদে কমপক্ষে ১০০ (একশত) জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০-৫০ জনের বসার উপযোগী বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন। এসব বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগারে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট, দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতার জন্য আলাদা কক্ষ, প্রত্যেক ইউনিটে ২টি টয়লেট এবং ২টি ইউনিটেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি যেদিন শপথ গ্রহণ করেন, সেদিনই প্রধান বিচারপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সারা দেশের আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের বিষয়টি জানান। তখনই প্রধানমন্ত্রী এমন বিশ্রামাগার করার উদ্যোগ নিতে বলেন। সে অনুযায়ী আইন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতিসহ জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরা এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেন। এরপর এই ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনসহ অবকাঠামোগত বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোয় পত্র দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সুপ্রিমকোর্টে এখন কোনো মামলার এফিডেভিট করতে হলে বিচারপ্রার্থীকে সশরীরে আসতে হয়। আবার আগাম জামিনের জন্যও বিচারপ্রার্থীদের সশরীরে আসতে হয়। কিন্তু তাদের বসার কোনো জায়গা নেই। কোনো ওয়াশ রুম নেই। সে জন্য সড়ক ভবনে একটি শেড নির্মাণের কাজ চলছে। আর এটার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল বজলুর রহমান এবং আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের প্রত্যক্ষ তদারকি, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে ডিজাইন ঠিক করে নির্মাণকাজ চলছে। আশা করছি, সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে স্থাপিত ‘ন্যায়কুঞ্জ’ খুব শিগগিরই উদ্বোধন করা হবে।

সূত্র : আমাদের সময়
এম এস, ১৪ জুলাই

Back to top button