ক্রিকেট

প্রথম ম‌্যাচ জিতলেই সিরিজ জেতে বাংলাদেশ

গায়ানা, ১৩ জুলাই – ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতলেই সিরিজ জিতে যাবে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশ ১-০ ব‌্যবধানে এগিয়ে। একটি পরিসংখ‌্যান বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে জ্বালানি হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য প্রথম ম্যাচ জেতা মানে সিরিজ জয়ের পথে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতলেই বাংলাদেশ জিতে যায় সিরিজ। পরিসংখ্যান তো বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলছে। দ্বিপাক্ষিক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলছে ৭৯তম ওয়ানডে সিরিজ।

এর মধ্যে কেবল ২৮টিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতে তারা। জয়ের হাসিতে শুরু করা সেই সিরিজগুলোর মধ্যে ২৫টি সিরিজ শেষ হয়েছিল জেতার আনন্দ নিয়ে। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর সিরিজ হারের রেকর্ড একদমই কম বাংলাদেশের, মাত্র ৩টি। আর প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজ জিতেছে পাঁচটিতে। এমন সাফল্যগাথায় বাংলাদেশ ৩১তম সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা করতেই পারে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তামিমের দল জয় পেলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে সিরিজ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশের রেকর্ডও ঈর্ষণীয়, ১৫টি। এই সিরিজে তামিমের দলের সামনে সবগুলো পথই খোলা আছে।

জয় দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর প্রথম ঘটনা ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে। বগুড়ার সেই ম্যাচটি ১৩১ রানে জেতে হাবিবুল বাশারের দল। তারই ধারাবাহিকতায় ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পূর্ণতা। মার্চের ওই সিরিজের পর আগস্টে কেনিয়ায় ছিল ফিরতি সফর। সেখানেও কীর্তির পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচ জেতার পর ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। ওই বছর জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুটি সিরিজে আবারো সেই অদম্য বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর হাবিবুলের দলের ৫-০ ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়।

বাংলাদেশ প্রথম সিরিজ জেতে তারও আগে, ২০০৪-০৫ মৌসুমে। জিম্বাবুয়েকে হারায় ৩-২ ব্যবধানে। তবে সেবার প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। সিরিজে ফিরে আসার অসাধারণ গল্প লিখে প্রথম সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে ধরা দেয় সাফল্য। কখনো বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দেশকে উৎফুল্ল করেছেন, কখনো কাঁদিয়েছেন। কখনো বড় দলকে নাস্তানাবুদ করেছেন। কখনো প্রত্যাশিত জয় হাতের নাগাল দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

প্রথম ম্যাচ জয়ের পরও সিরিজ হারের সংখ্যা তিনটি। ২০০৩-০৪ মৌসুমে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। বৃষ্টিতে প্রথম দুই ম্যাচই পরিত্যক্ত। মাঠে গড়ানো প্রথম ম্যাচ মানে তৃতীয় ওয়ানডে বাংলাদেশ জিতেছিল ঠিকই। কিন্তু শেষ দুই ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জেতে।

২০০৮-০৯ মৌসুমেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। প্রথম ওয়ানডেতে মাশরাফির ৪ উইকেটে নিউ জিল্যান্ডকে ২০১ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে জুনায়েদ সিদ্দীকির ৮৫ ও আশরাফুলের অপরাজিত ৬০ রানে ৭ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে বিজয়ের মালা পরতে পারেনি স্বাগতিকরা। সবশেষ ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে জিতলেও শেষ দুই ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ।

মুদ্রার উল্টোপিঠে সাফল্যের চিত্রও আছে। প্রথম ম্যাচ না জিতে সিরিজ জয়ের রেকর্ড আছে পাঁচটি। প্রথমটা ২০০৪-০৫ মৌসুমে। জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম দুই ম্যাচ জেতে, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ শেষ তিনটি ম্যাচ জিতে ফিরে আসার অসাধারণ গল্প লেখে।

২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ পরপর তিন বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি সিরিজে জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিটি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ফিরে আসে দারুণভাবে। সবশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে ২০১৫ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ সফরে এসে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও জিতেছিল প্রথম ম্যাচটি।

যে কোনো প্রাপ্তিই আনন্দের। প্রথম ওয়ানডে জিতে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে সিরিজ জয়ের হাতছানি। তামিমরা নিশ্চয়ই সিরিজ জয়ের অপেক্ষা দীর্ঘ করতে চাইবেন না। আরেকটি সিরিজ জয় বাংলাদেশের রেকর্ডবই আরো সমৃদ্ধ করবে বলার অপেক্ষা রাখে না।

এক নজরে পরিসংখ্যান

বাংলাদেশের ৭৯তম সিরিজ। (ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ)

সিরিজ জিতেছে: ৩০টি

হোয়াইটওয়াশ করেছে: ১৫টি

সিরিজ জিতেছে কিন্তু ম্যাচ হেরেছে: ১৫টি

প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়: ২৫টি

প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজ জয়: ৫টি

প্রথম ম্যাচ জিতেছে কিন্তু সিরিজ হেরেছে: ৩টি

বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে: ৩৫ বার

কমপক্ষে এক ম্যাচ জিতে সিরিজ হার: ১০টি

সিরিজ ড্র: ৩টি

সূত্র : রাইজিংবিডি
এম এস, ১৩ জুলাই

Back to top button