কোরবানি ঈদে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
কোরবানি ঈদে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করেন কমবেশি সময়। এর বেশিরভাগই ভারি খাবার যেমন-ভাত, মাংস, পোলাও কিংবা বিরিয়ানি। কোরবানি ঈদের পরে বিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত খাওয়ার কারণে অনেকেই ঈদের সময় সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তবে এর কারণ ও প্রতিরোধের উপায় কী চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক-
কোষ্ঠকাঠিন্য কী?
কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি একেকজনের কাছে একেক রকম অর্থবহন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে খুব শক্ত মলত্যাগ হওয়া, সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হওয়া কিংবা মলত্যাগ করতে প্রচুর সময় ব্যয় হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে মলত্যাগের পরও মনে হওয়া যে, মলাশয় খালি হয়নি এরকম। কোষ্ঠকাঠিন্য দু’ধরনের হয়, সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য ও ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য
যদি অল্প কয়েক দিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যতার উপসর্গ দেখা দেয়, অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যতার সময় যদি তিন মাসের কম হয়, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা বলে।
যেমন- কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাং বা ভারি খাবার খাওয়ার দেখা গেলো দুই-তিন দিন মলত্যাগ হচ্ছে না কিংবা খুব শক্ত ও অল্প অল্প মলত্যাগ হচ্ছে, তাহলে এই অবস্থাকে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। একটা তিন মাস পর্যন্তও যদি এ সমস্যা দেখা দেয় তাহলেও সেটি সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলে বিবেচিত হবে।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় সারা বছর সুস্থ থাকলেও কোরবানি ঈদ ও এর পরের কয়েকদিন প্রচুর মাংস খাওয়ার কারণে মলত্যাগ হয় না। ফলে পেট ফুলে যায় ও ব্যাথা হচ্ছে। এই অবস্থাকেও সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতার উপসর্গ কী কী?
>> মলত্যাগের সাধারণ রুটিন পরিবর্তন হওয়া
>> শক্ত মলত্যাগ
>> মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা
>> মলত্যাগ করতে গেলে জোর প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হবে
>> অল্প অল্প মলত্যাগ
>> পেট ফুলে যাওয়া
>> পেটে ব্যথা
>> কিছুক্ষষ পরপর বায়ু ত্যাগ
>> খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া
>> দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে
>> স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে-
>> হেমোরয়েড বা পাইলস: এক্ষেত্রে পায়ুপথের আশেপাশের রক্তনালিগুলোতে প্রদাহ হতে পারে। ফলে মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে রক্ত বের হওয়া, ব্যথা ও পায়ুপথে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
>> অ্যানাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
>> ইউরিনারি ইনকন্টিন্যান্স বা প্রসাবে অনিয়ম দেখা দিতে পারে।
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগার কারণ কী?
অ্যাকচু কনস্টিপেশন বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা মূলত ভুল জীবনধারণেরকারণে দেখা দেয়। যেমন-
>> আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া তথা শাক সবজি কম খাওয়া
>> নিয়মিত মলত্যাগ না করা বা মলত্যাগ আটকে রাখা
>> নিয়মিত খাবার না খাওয়া
>> পরিমিত ঘুম না হওয়া
>> চিন্তা অবসাদগ্রস্ত থাকা ইত্যাদি
>> আইবিএস এর সমস্যা থাকা
>> ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যেমন- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, এন্টি স্পাজমোডিক, এন্টি ডায়েরিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, এলুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড খেলে।
>> দৈনিক অত্যাধিক পরিমান প্রোটিন কিংবা বেশি মাংস খেলে সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যতা দেখা দিতে পারে।
সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে করণীয়
লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমন-
>> প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সবজি খাওয়া
>> পর্যাপ্ত পানি পান করা
>> ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খাওয়া
>> অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা
>> অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এড়িয়ে থাকতে হবে
>> দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রামের চেয়ে বেশি মাংস না খাওয়া
>> নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খেতে হবে
>> সম্ভব হলে প্রতিদিন আপেল খান, এদে পর্যাপ্ত ফাইবার থাকে
>> নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
>> যেদিন বেশি পরিমাণে মাংস খাবেন সেদিন এর সঙ্গে শাক-সবজি, গাজর, শসা, সালাদ ইত্যাদি রাখুন।
>> সকাল, দুপুর ও রাতে এক গ্লাস পানিতে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভূসি মিশিয়ে ইসবগুলের শরবত খান।
এতে করে কোলনের মধ্যে কিছু পরিমান পানি রিটেনশন হবে ও মল নরম থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যায়।
ঈদ উৎসবে পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। এতে দেহ ও মন সুস্থ থাকবে। সবার উৎসব আনন্দময় হোক।
এম এস, ১১ জুলাই