চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম ১৫০ টাকা!

চট্টগ্রাম, ১০ জুলাই – চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় কোরবানিতে জবাই করা গরুর চামড়া এবারও বিক্রি করতে হয়েছে পানির দরে। ১৫০-২০০ টাকার বেশি কেউ চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। অনেকে দাম কম হওয়ায় চামড়া মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলেছেন।

রোববার (১০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করেন খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

একসময় উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে চামড়ার বড় আড়ত ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখানে গরু-ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে আসতেন। এখন দাম কম হওয়ায় আসা তো দূরের কথা, কোরবানির গরুর চামড়াকে বোঝা মনে করছেন অনেকে!

সাহেরখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ মঘাদিয়া এলাকার এনামুল হক বলেন, ‘কোরবানির গরু কিনেছি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। সেই গরুর চামড়া অনেক কষ্টে মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৫০ টাকার বেশি দিতে চায় না। আজ থেকে ১২-১৫ বছর আগে আমি ৩০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ১৫০০-১৬০০ টাকায়।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়লেও গরুর চামড়ার দাম কমে গেছে।’

মলিয়াইশ এলাকার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘৯৩ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া কিনতে চায় ১৫০ টাকা দিয়ে। তাও সারাদিনে মাত্রা একজন চামড়া কিনতে এসেছেন। পরে বাড়ির পাশে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে চামড়া ব্যবসায়ী নুরুল আলম বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দাম দেন না। লবণযুক্ত মালামাল হওয়ায় উপায়হীন হয়ে তাদের কাছে ধরনা দিতে হয়। বলতে গেলে একরকম জিম্মি হয়ে ব্যবসা করতে হয়। তাছাড়া এবার লবণের দামও বেড়েছে।’

মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় কথা হয় চামড়া কিনতে আসা ইকবালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ওপর থেকে যেভাবে কিনতে বলা হয়েছে আমি সেভাবে চামড়া কিনতেছি। মাঝারি গরুর চামড়া ১৫০ টাকা ও বড় গরুর চামড়া ২০০ টাকায় কিনেছি। সকাল থেকে প্রায় ১৫০টি চামড়া কিনেছি।’

একই এলাকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘কোরবানির চামড়ার টাকা যায় এতিম-অসহায়দের কাছে। এটা তাদের হক। কিন্তু বিগত কয়েক বছর চামড়ার ন্যায্যমূল্য না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।’

সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর চামড়া কিনে বাজারে বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রির জন্য বসেছেন খুচরা বিক্রেতারা।

নিজামপুর বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আসা মো. হারুন বলেন, ‘গতবছরও কোরবানিতে গরুর চামড়া কিনে লোকসান হয়েছে। এবার লাভের আশায় অপেক্ষা করছি। আশা করছি আজ রাতের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে মিরসরাই চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নুর উদ্দিন বলেন, ‘আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে মিরসরাই থেকে কোরবানি ঈদে কয়েক কোটি টাকার চামড়া ঢাকায় পাঠানো হতো। ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে থাকা পুঁজি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে বর্তমানে ৬০-৭০ লাখ টাকাও হয় না।’

সূত্র: জাগো নিউজ
এম ইউ/১০ জুলাই ২০২২

Back to top button