জাতীয়

এবার এলাকামুখী বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ

ঢাকা, ০৯ জুলাই – এবার ঈদে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন অধিকাংশ রাজনীতিবিদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তারা নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও নানা কর্মসূচি পালন করবেন।

যারা ঈদে ঢাকায় থাকবেন তারাও ফোনে এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন ঈদ উপহার। কেউ কেউ গরু-ছাগল কুরবানি দেওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় নেতাদের টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আবার ঈদের আগে নির্বাচনি এলাকা ঘুরে এসেছেন অনেকেই। ঈদের পরও যাবেন অনেক নেতা। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ সব কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ঈদ করবেন রাজধানী ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে। স্বাভাবিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিদেশি কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। তবে করোনার কারণে গত কয়েকটি ঈদের মতো এবার ঈদুল আজহার দিনে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি রাখা হয়নি।

গণভবন সূত্রে জানা গেছে-আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না থাকলেও ফোনে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এছাড়া অডিও এবং ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী এবারও ঢাকাতেই ঈদ করবেন। দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুও রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে নোয়াখালীতে নিজের নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ঈদ করবেন নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে। নির্বাচনি এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ঈদ করবেন ঢাকায়। ঢাকায় ঈদ করবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানও। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকার মোহাম্মদপুরে ঈদ করবেন। ঈদের আগেই নিজ এলাকা যাবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ নিজ জেলা কুষ্টিয়ায় ঈদ করবেন। আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ঈদ করবেন নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে ঈদ করবেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় চলে গেছেন।

অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে হাসপাতাল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ফিরেছেন। তিনি এখনো অসুস্থ। বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম এস্কান্দারসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়ে গুলশানের বাসাতেই ঈদ করবেন। ওইদিন তার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দেখা করার কথা রয়েছে।

এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাতেই ঈদ করছেন। ঈদের পরদিন তার নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে যাবেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদের পরদিন কুমিল্লার দাউদকান্দি যাবেন। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস ঢাকায় ঈদ করবেন।

ড. মঈন খান জাতিসংঘের একটি সেমিনারে আমেরিকা অবস্থান করবেন, কিন্তু তার নিজ এলাকা নরসিংদীর পলাশে নেতাকর্মীদের জন্য কুরবানির আয়োজন করেছেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ এলাকা চট্টগ্রামে ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ করবেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অনেকে ঢাকায় থাকবেন। আর ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান নোয়াখালীতে ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।

এবার বিএনপির মধ্যম সারির নেতারাও এলাকায় যাচ্ছেন। বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল তার নির্বাচনি এলাকা খুলনা-৩ এলাকায় দুস্থ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য পশু কুরবানি দেবেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকার নিজ নিবাচনি এলাকায় ঈদ করবেন। পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে গেছেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল।

টুকু টাঙ্গাইলে ও জুয়েল নরসিংদীতে নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য কুরবানির ব্যবস্থা করেছেন। যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাও ঢাকাতে ঈদ করবেন।

আবার ভিন্নচিত্রও রয়েছে। অনেক বিএনপি নেতা নিজ এলাকায় ইচ্ছা করলেও যেতে পারছেন না। বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন জানান, গত ঈদে সরকারি দলের হামলা-মামলার কারণে নিজ এলাকা বরিশালের গৌরনদীতে যেতে পারিনি। এবার প্রথমে বরিশাল সদরে যাব। পরে গৌরনদীতে যাওয়ার কথা রয়েছে, কিন্তু যেতে পারব কিনা জানি না।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ঢাকায় ঈদ করবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে ঈদ করবেন।

এছাড়া দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতা ঢাকায় ঈদ করবেন। গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ ঢাকায় ঈদ করবেন। তবে এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ তার নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লার চান্দিনাতে ঈদ করবেন। এলডিপির আরেক অংশের সভাপতি আব্দুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমও ঢাকায় ঈদ করবেন।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/০৯ জুলাই ২০২২

Back to top button