জাতীয়

বাংলাদেশ থেকে ভারতে চোরাচালান করা পণ্যের শীর্ষে সোনা

মেহেদী হাসান

ঢাকা, ০৩ জুলাই – বাংলাদেশ থেকে ভারতে চোরাচালান করা পণ্যের শীর্ষে আছে সোনা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) অতুল ফুলেঝেলে গত বৃহস্পতিবার কলকাতায় বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে ব্রিফিংকালে এ কথা জানান। তিনি বলেন, দামের পার্থক্যের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা চোরাচালানের বিষয়টি তাঁদের এখন জোরালোভাবে মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এর এক দিন আগে গত বুধবার সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের বিপরীতে ঘোজাডাঙ্গায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির যশোর রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ সোনা চোরাচালান হয় আমার এলাকা দিয়ে।

আমরা চেষ্টা করছি, চোরাচালান যতটা কমানো যায়। ’

বিএসএফের আইজি অতুল ফুলেঝেলে কলকাতার রাজারহাটে বিএসএফ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মূলত গবাদি পশু, ফেনসিডিল, রুপার অলঙ্কার ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাচালান হয়। সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে ‘ফিশ বল’ বা ‘ফিশ সিড’ পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বড় চোরাচালান এখন সোনা। এর কারণ দামের তারতম্য। আমরা এখন জোরালোভাবেই এই ইস্যুর মুখোমুখি হচ্ছি। ’

বিএসএফের আইজি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে ৩৩ কেজি সোনা উদ্ধার করেছি। ২০২১ সালে কভিড মহামারির মধ্যে আমরা ৩০ কেজি সোনা উদ্ধার করেছি। চলতি ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার করা সোনার পরিমাণ ৩৩ কেজি ছাড়িয়ে গেছে। ’

সোনা চোরাচালান বাড়ছে নাকি উদ্ধার বাড়ছে, জানতে চাইলে বিএসএফের আইজি বলেন, “আমার মনে হয়, দুটোই। সোনা চারাচালান বাড়ছে। আবার আমরাও খুব সতর্ক আছি। আমাদের তৎপরতা মূলত ‘ক্যাচিং’, ‘ডিটেকশন’ ও ‘প্রিভেনশন ইন্টেলিজেন্স বেজড’। আমাদের সতর্ক গোয়েন্দা ব্যবস্থা দিয়ে আমরা এখন অনেক চালান ধরতে পারি। ” তিনি বলেন, ‘আপনারা বিস্মিত হবেন না, পেট্রাপোলে আমরা প্রায় ১১ কেজি সোনা জব্দ করেছি। এর দুই-তিন পর বেনাপোলে বিজিবি ১৫ কেজি সোনা জব্দ করেছে। ’

সোনা চোরাচালান ঠেকাতে বিএসএফের উদ্যোগ কি কেবল গোয়েন্দা তৎপরতাভিত্তিক— প্রশ্নের জবাবে বিএসএফের আইজি বলেন, সোনা, রুপা বা মাদক—যেকোনো চোরাচালান ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ। সোনার ক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু তৎপরতা অনুসরণ করছি। তিনি বলেন, ‘একটি পদ্ধতি খুব উদ্ভট। চোরাকারবারিরা সীমান্তে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সোনা ছুড়ে মারে। সীমান্ত বেড়ারও নির্দিষ্ট উচ্চতা আছে। কিন্তু তারা এমনভাবে ছুড়ে মারে যে তা সীমান্ত পেরিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে পৌঁছায়। ’

বিএসএফ আইজি বলেন, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়া ট্রাকগুলো খালি ফিরে আসে। সেগুলোতেও কিছু সোনা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে জব্দ করেছি। ’

সোনা চোরাকারবারিদের বিষয়ে বিএসএফের কাছে তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল সুরজিৎ সিং গুলেরিয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে তালিকা আছে। সোনা বহনকারীর সংখ্যা বেশি। কিংপিন্সের (মূল হোতার) সংখ্যা কম। আমাদের এলাকায় আটজন কিংপিন্স আছে। ’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তৎপর অপরাধীদের তালিকা আমরা বিজিবিকে দিয়েছি। বিজিবি আমাদের সীমান্তের ভারতীয় অংশে তৎপর অপরাধীদের তালিকা দিয়েছে। অপরাধ মোকাবেলার অংশ হিসেবে আমরা এ ধরনের তালিকা নিয়মিত বিনিময় করি। ’

সোনা চোরাচালান বাড়ছে কি না জানতে চাইলে বিজিবির যশোর রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদী বলেন, ‘সোনা চোরাচালান সারা বছরই চলে। হয়তো কোনো একটা সময় বেশি হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সোনা চোরাচালান হয় আমার বেল্ট দিয়ে। আমরা আমাদের অংশে চেষ্টা করছি, যতটা কমানো যায়। ’ তিনি বলেন, ‘বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক সময় সীমান্ত থেকে আট কিলোমিটারের বাইরে গিয়েও আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে যৌথ অভিযান চালাচ্ছি। ’

নজরদারির কারণে সীমান্তে সোনা চোরাচালান জব্দ বাড়ছে কি না জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদী বলেন, ‘আমাদের তৎপরতা, চিন্তা-ভাবনা বেড়েছে। আমরা এখন অনেক সংগঠিত। পাচারকারীচক্রের সদস্যরা ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলে আমরা জানতে পারি। আমরা তাদের অনুসরণ করছি ও ধরছি। আমরা কিছু কার্যকর ব্যবস্থা চালু করেছি। ’

সূত্র : কালের কণ্ঠ
এম এস, ০৩ জুলাই

Back to top button