ঢাকা, ০২ জুলাই – ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. বশির আহমেদের অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি মূল্যের অবৈধ সম্পদ খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ড্রেজিং কোম্পানি হিসেবে দাবি করা এই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে। মূলত তারা নদী ড্রেজিং এবং বাঁধ, সেতু, সড়ক-মহাসড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ১ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনসহ অবৈধভাবে ৫১ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। আর এ অভিযোগে মামলা দায়ের অনুমোদন নিতে কমিশনে বেশকিছু সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুদকের তথ্যমতে, বশির আহমেদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। তা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংস্থাটির উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন কমিশন। অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়েরের সুপারিশ তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার তিনি কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন। আর সেই অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ পেয়ে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বশির আহমেদ ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎসের বিস্তারিত তথ্য চায় দুদক। ওই নোটিশ পেয়ে নিজের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন বশির।
অনুসন্ধান সূত্র বলছে, দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে বশির আহমেদ ১৯৯০ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত ৯০টি দলিল মূলে জমি, জমিসহ বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় এবং বাড়ি নির্মাণে ৪৬ কোটি ৩১ লাখ ৬২ হাজার ৬৫০ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখান। স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, গাড়ি, কোম্পানি শেয়ার (ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং (প্রা.) লিমিটেড, দি ইম্পেরো প্রপার্টিজ লি., ওয়েস্টার্ন ডেজার্ড (প্রা.) লি., ওয়েস্টার্ন ব্লক মেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ প্রা. লি.) ও বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরসহ মোট ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেন বিবরণীতে। সব মিলয়ে যা ৫২ কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। তবে অনুসন্ধানে নেমে বশির আহমেদের নামে ৯২টি দলিলমূলে জমি, জমিসহ বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় এবং বাড়ি নির্মাণসহ সর্বমোট ৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ২২ হাজার ৫৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, গাড়ি, কোম্পানির শেয়ার ও বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরসহ অস্থাবর সম্পদ মেলে ৬ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ২৮৬ টাকার। সেই হিসাবে ১ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেন এই ব্যবসায়ী।
দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা গেছে, নিজের সম্পদ অর্জনের বিপরীতে ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত বশিরের কেবল ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৩০ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায়। এমনকি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৫১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৩ টাকা নিট সম্পদ উল্লেখ করে তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। এর পরের অর্থবছরেই (২০২০-২০২১) সেই সম্পদ ২৯ কোটি ১০ লাখ ১৫ হাজার ২১৩ টাকার উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন তিনি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানেই সম্পদ বিবরণীতে ২২ কোটি ৭৭ লাখ, ৬৮ হাজার ৩০০ টাকার সম্পদ কম দেখিয়েছেন; যা সন্দেহজনক। তদন্তকালে এটি খতিয়ে দেখা হবে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এও উল্লেখ করা হয়েছে- বশির আহমেদ ২০১৯-২০ করবর্ষে মধুমতি ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক থেকে ৬৩ কোটি, ৮৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৫ টাকা ঋণ নেওয়ার ঘোষণা করেন। কিন্তু কোন ব্যাংকে কত টাকা ঋণ ছিল তা পৃথক পৃথকভাবে জানাননি। তার সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানকালে যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের মহাখালী শাখায় এবং মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের বাংলামোটর শাখায় মোট ৪২ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪ টাকা ঋণের সন্ধান মিলে। তবে সেগুলো বশির আহমেদের ঋণ কিনা বা তার ওপর বর্তায় কিনা- এ বিষয়ে লিগ্যাল অনু বিভাগের মতামত নিয়ে মামলা রুজু করা যেতে পারে।
সূত্র : আমাদের সময়
এম এস, ০২ জুলাই