লালমনিরহাট

ইউএনওকে মেরে লাশ পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি চেয়ারম্যানের!

লালমনিরহাট, ১২ নভেম্বর- লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ভিজিডি কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরিতে ভাগ না পেয়ে ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার বিকালে এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলার সকল অফিসারকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

অভিযোগে জানা গেছে, দুস্থ নারীদের সহায়তার জন্য মহিলা বিষয় অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিডি প্রকল্প চালু করে সরকার। সস্প্রতিক সময় সেই প্রকল্পের উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত কাজ শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী অনলাইনে আবেদনগুলোর বাচাই করে ইউনিয়ন পরিষদ চূড়ান্ত করে উপজেলা কমিটিকে জমা দেবে। উপজেলা কমিটি তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। সেই ভিজিডিতে ভাগ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলা পরিষদ হলরুমে মাসিক সভা চলছিল। এ সময় ভিজিডিতে ভাগ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ সময় বিধি মোতাবেক ভাগ দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান ইউএনও। এতে সভায় বিতর্ক বাধলে সভাস্থল ত্যাগ করে নিজের অফিসে চলে যান উপজেলা চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান লোক দিয়ে উপজেলা পরিষদের সিসিটিভি’র ক্যামেরায় কাজ করছিলেন। সেই কাজ কার নির্দেশনায় হচ্ছে এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান নিজের নির্দেশনায় করছেন বলে ইউএনওকে জানান। এ সময় ইউএনএ দৃশ্যটি নিজের মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। কেন ছবি তুললেন- এ নিয়ে ইউএনওকে বাবা তুলে গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান। এতে দ্বিতীয় দফায় উভয়ের মাঝে বেশ উত্তেজনার সৃষ্ঠি হয়। অফিসাররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে তাদেরও অকথ্য ভাষায় চেয়ারম্যান গালমন্দ ও মারপিটের হুমকি দেয়া হয় বলে অফিসাররা জানান।

খবর পেয়ে আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম ফোর্স নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে উপজেলা পরিষদে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন। এ সময় ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন উপজেলার সকল অফিসারকে নিয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে বিচার দাবি করেন। জেলা প্রশাসক আবু জাফর অফিসারদের অভিযোগ শুনে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অফিসার জানান, শুরু থেকে ইউএনও এবং চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। চেয়ারম্যান প্রায় সময়ই অফিসারদের দ্বিতল ভবন থেকে ফেলে দেয়ার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। মাসিক সভায় ভিজিডি’র ভাগ না পেয়ে ইউএনওকে গালমন্দ করে সভা থেকে বেড়িয়ে যান চেয়ারম্যান। পরে বারান্দায় আবারো গালমন্দ করেন। ইউএনওকে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা তোর বাবার উপজেলা? তোকে মেরে লাশ নরসিংদীর লোক নরসিংদীতে পাঠিয়ে দেবো’।

আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। অনিয়মের বিরোধিতা করায় প্রায় সময় অফিসারদের সাথে অসৌজন্য আচরণ করেন চেয়ারম্যান। এসব নিয়ে অফিসাররাও ক্ষিপ্ত।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, কোনো ধরনের মিটিং ছাড়াই ইউএনও একক সিদ্ধান্তে কাজ করছেন। আশ্রয় প্রকল্প ২ এবং এডিপি’র কাজ নিজেই করছেন ইউএনও। নানান অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমার ওপর অফিসারদের ক্ষেপিয়ে অফিস ছেড়ে ডিসি অফিসে গেছেন ইউএনও। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করুক। তদন্ত করলে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ইউএনওসহ অফিসারদের কথা শুনে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে অফিসে ডাকা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

আর/০৮:১৪/১২ নভেম্বর

Back to top button