জাতীয়

শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

ঢাকা, ৩০ জুন – সাভারে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার নগরহাওলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

র‌্যাব জানায়, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হলে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে।

জিতু ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছিল। একপর্যায়ে তার অবস্থান শনাক্ত করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরহাওলা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাকে গ্রেপ্তারে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার গভীর রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি বিশেষ দল কুষ্টিয়ার কুমারখালী এলাকা থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার সকালে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ওই হত্যা মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান।

যে স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপলকে পেটানো হয়েছে, সেটিও জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার (বিপিএম, পিপিএম)।

বুধবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুছ আলী কলেজ পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এ কথা জানান।

মামলায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলায় কী দেখানো হলো এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা করে নিয়ে আসব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। এ ছাড়া তদন্তে ধীর গতির কোনো কিছু নাই। ঘটনা জানার পর থেকেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশের কার্যক্রম প্রথম থেকে স্বাভাবিক গতিতে চলছে। এরই মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি টিম মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। খুব শিগগিরই মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।

এ সময় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, অভিযুক্ত ছাত্র দশম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স ছিল ১৯। সে ক্লাস নাইনে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে ছাত্র হিসেবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির। উচ্ছৃঙ্খল।

কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, যেখানে উৎপলকে পেটানো হয়, সেই জায়গা কলেজের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতাধীন বলে আশরাফুল ইসলাম জিতু ঘটনার আগে আগে মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়, যেন কোনো কিছু ক্যামেরায় রেকর্ড না হয়।

এ ছাড়া জিতুর প্রকৃত বয়সের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের একটি নথি সরবরাহ করেন অধ্যক্ষ। যেখানে আশরাফুল ইসলাম জিতুর পরিচয় লেখা ছিল, বাবা মো. উজ্জ্বল, মা জুলেখা বেগম ও তার জন্ম তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০০৩। সে হিসাবে জিতুর বয়স ১৯ বছর।

অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার সকালে তৃতীয় দিনের মতো আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে এবং ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

এ ছাড়া সাভার সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উৎপল কুমার সরকারকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ওই শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার মারা যান। রবিবার আশুলিয়া থানায় নিহত শিক্ষকের ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে জিতুসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে এখনো অভিযুক্ত শিক্ষার্থী পলাতক রয়েছে।

সূত্র : দেশ রুপান্তর
এম এস, ৩০ জুন

Back to top button