ইউরোপ

আইনের ঊর্ধ্বে উঠছেন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা

লন্ডন, ০৬ জুন – উপনিবেশ শাসনের শত শত বছর হত্যা, চুরি ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল ব্রিটিশরা। নতুন এক আইনের মাধ্যমে আবার সেই ‘ নীতিকেই’ বৈধতা দিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার। অর্থাৎ উপনিবেশ আমলের মতো এখনো যদি দেশটির মন্ত্রী ও গোয়েন্দারা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে গিয়ে হত্যা-নির্যাতনের মতো বর্বর কর্মকাণ্ড ঘটায়, তা অপরাধ হিসাবে দেখবে না ব্রিটেন। এ সংক্রান্ত একটি বিল আজ সংসদে তুলবেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা; যাতে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও গোয়েন্দাদের। আইনে বলা হয়েছে, হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা কিংবা নির্যাতন করলেও এই বিলের মাধ্যমে আগেই তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। ব্রিটেনের এ পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। বলছে, এর মাধ্যমে আইনের ঊর্ধ্বে উঠছেন ব্রিটিশ মন্ত্রীরা।

নতুন আইনটিতে প্রস্তাবিত ক্ষমতাগুলো ‘অত্যন্ত নমনীয়’ এবং সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার নৃশংসতার নিন্দা জানাতে ব্রিটেনের নৈতিক কর্তৃত্বকে প্রশ্নের সম্মুখীন করবে। ২০০৭ সালে পাশ হওয়া গুরুতর অপরাধ আইনে পরিবর্তনের এই উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা। বেআইনি হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করা, জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের জন্য তথ্য পাঠানো, বিদেশে এ ধরনের কাজে সহায়তা করাকে অপরাধ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল আইনটিতে। তবে সংশোধিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনে এই বিধানটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাতে গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ, এমআইসিক্স, জিসিএইচকিউ কিংবা সামরিক বাহিনীকে ‘যেকোনো কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে’ দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সোমবার হাউজ অব কমন্সে আইনটির দ্বিতীয় পঠন অনুষ্ঠিত হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রাইভের মতে, নতুন এই বিধান কার্যকরভাবে সেসব মন্ত্রী বা কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি প্রদান করবে-যারা ড্রোন হামলায় কাউকে নির্যাতন বা বেআইনিভাবে হত্যার জন্য বিদেশি অংশীদারদের তথ্য সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, এই আইনের কারণে আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ক্ষমতাকেও সীমিত করবে। রিপ্রাইভের যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক মায়া ফোয়া বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে যে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে তা অচিন্তনীয়। আইনটি মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাধারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ঊর্ধ্বে রাখার ঝুঁকি তৈরি করবে। শুধু তাই নয়, আইনটি কর্তৃপক্ষকে গুরুতর অপরাধ করার ক্ষমতা দেবে এবং আগাম দায়মুক্তির দরুন স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবে যেতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিলের ২৩ ধারাটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে নৃশংসতার নিন্দা করার ক্ষেত্রে ব্রিটেরের নৈতিক অধিকারকে নিশ্চিহ্ন করবে।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ডেভিড ডেভিস ফোয়ার এ বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, ‘এই বিলটি এত ঢিলেঢালাভাবে তৈরি করা হয়েছে, মন্ত্রীরা যদি হোয়াইট হলে তাদের ডেস্কে বসে হত্যা কিংবা নির্যাতনের মতো অপরাধের অনুমোদন দেন-তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’ সভ্যতার স্বার্থে আইনটিকে আরও সীমাবদ্ধ করার অনুরোধ জানান সাবেক এই আমলা।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘গুরুতর অপরাধ আইনের সংশোধনী শুধুমাত্র অপরাধমূলক দায়বদ্ধতার সম্মুখীন ব্যক্তিদের ঝুঁকি দূর করবে-যেখানে তারা প্রয়োজনীয় বলে মনে করবেন। সাধারণভাবে বললে, সরকার বিশ্বাস করে যে এই কর্মের দায়ভার একজন যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের ওপর চাপানো ন্যায়সঙ্গত নয়-যারা সম্পূর্ণ বৈধ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।’

বিলটি গত মাসের এক বক্তৃতায় উত্থাপন করেছিলেন স্বয়ং রানি। ব্রিটেনকে রক্ষার প্রয়াসে দেশটির গুপ্তচর সংস্থাগুলোকে সমর্থন করতেই মূলত রানির এ বিল। শেষমেশ বিলটির ভাগ্যে কী আছে, তা দেখার জন্য সোমবারের বিতর্কের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র : যুগান্তর
এম এস, ০৬ জুন

Back to top button