ইউরোপ

আফ্রিকানরা ইউক্রেন যুদ্ধের শিকার, শুনলেন পুতিন

মস্কো, ০৪ জুন – ইউক্রেনে যুদ্ধের নিরীহ শিকার হচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলো। আর তাদের দুর্ভোগ কমাতে রাশিয়ার সহায়তা করা উচিত। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এসব কথা বলেছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধান ম্যাকি সাল।

রাশিয়ার সোচি শহরে দুই নেতার আলোচনার পর ম্যাকি সাল বলেন, রুশ নেতা শস্য এবং সার রফতানি সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

ইউক্রেনের বন্দর থেকে শস্য রফতানি মস্কো আটকে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে আসছেন পুতিন। আফ্রিকা সাধারণভাবে গ্রহণ করা গমের প্রায় ৪০ শতাংশ পায় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।

তবে সংঘাত শুরুর পর থেকে কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগগুলো দিয়ে রফতানি মূলত বন্ধ হয়ে আছে। কিয়েভ ও তার মিত্রদের অভিযোগ বন্দর অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এসব বন্দরে রুশ হামলা ঠেকাতে মাইন পোঁতা হয়েছে।

জাতিসংঘের সংকট সমন্বয়ক আমিন আওয়াদ জেনেভায় বলেন, ‘ওইসব বন্দর খোলার ব্যর্থতার ফলাফল হবে দুর্ভিক্ষ।’ তিনি বলেন, শস্য সংকটে আক্রান্ত হতে পারে ১১৪ কোটি মানুষ। আর এতে ব্যাপক আকারে অভিবাসন বাড়তে পারে।

ফলন এবং নিরাপত্তাহীনতায় আফ্রিকায় ইতোমধ্যে খাদ্য সংকট চলছে। আর ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রায় ১০০ দিন আগের ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হলে আফ্রিকা মহাদেশে খাবারের দাম বাড়তে শুরু করে, ফলে বিপুল মানুষ ক্ষুধার্ত থাকতে শুরু করে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান মাইক ডানফোর্ড বলেছেন, ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়, আফ্রিকায় চরম ক্ষুধার্ত রয়েছে। গত বছর একই সময় মহাদেশটির ৫ কোটি মানুষ এই পরিস্থিতিতে ছিল।

চাদ ইতোমধ্যে জাতীয়ভাবে খাদ্য জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল পুতিনকে বলেছেন তার ‘সচেতন হওয়া উচিত আমাদের দেশগুলো, এমনকি তারা থিয়েটার [অ্যাকশন] থেকে দূরে থাকলেও, এই অর্থনৈতিক সংকটের শিকার’। তিনি জানান, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকেও সহায়তার আবেদন করেছেন।

পুতিন বলেছেন, আজভসহ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য নিরাপদভাবে রফতানির নিশ্চয়তা দিতে রাশিয়া প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে বেলারুশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। রাশিয়ার এই মিত্র দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে বেলারুশ দিয়েই রফতানি চলতে পারে।

কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করছেন, ক্রেমলিন ভাবছে আগাতে থাকা খাদ্য সংকট পশ্চিমের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে। এতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার খাদ্য নিরাপত্তাহীন দেশগুলো থেকে বড় আকারের শরণার্থী প্রবাহ ইউরোপের দিকে রওনা হবে।

শুক্রবার বৈঠকের আগে পুতিন বলেন, তিনি সব সময়ই আফ্রিকার পাশে আছেন, তবে সুনির্দিষ্টভাবে সেখানকার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কথা বলেননি তিনি।

আফ্রিকার অন্য অনেক দেশের মতো সেনেগাল এই সংঘাতে পক্ষ নেওয়া এড়িয়ে গেছে। আর সেনেগালের নেতা মনে করে রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা উচিত খাদ্য সরবরাহ। তিনি জানান, এই সপ্তাহের শুরুতে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি একই কথা বলেছেন।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
এম ইউ/০৪ জুন ২০২২

Back to top button