ব্যবসা

এক মাস আগেই রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ

ঢাকা, ০২ জুন – ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকায় এক মাস বাকি থাকতেই পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যামাত্রা ছাপিয়েছে রপ্তানি; মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

তবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এ খাতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির যে সুবাতাস ছিল তা নয় মাস পর কিছুটা ধীর হয়েছে। আর টানা নয় মাস লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে থাকার পর মে মাসে সামান্যের জন্য একক মাসের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে রপ্তানি আয়।

বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত রপ্তানির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে ৩৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের মে মাসে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

গত মাসে ৩৮৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র এক দশমিক ৬৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে আয়।

একক মাসওয়ারি হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে না পারলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গেছে। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি হয়েছে রপ্তানি। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা এবং গত অর্থবছরের মোট আয়কে ছাড়িয়ে গেছে তা।

গত ১১ মাসে ৩,৯৮৬ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪,৭১৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ আয় আগের বছরের জুলাই থেকে মে সময়ের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি।

গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩,৫১৮ কোটি ডলার। আর পুরো অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩,৮৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পেয়েছিল।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও অগাস্টের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় রপ্তানি খাত। প্রতি মাসেই রপ্তানির পালে ছিল সুবাতাস। পর্যায়ক্রমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এ খাতে।

জুলাই মাসে ৩৪৭ কোটি ডলার আয় দিয়ে শুরু অর্থবছরের পরের মাসগুলোতে তা ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যায়। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট রপ্তানি ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ডলার আয় আসে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি।

এরমধ্যে এপ্রিলে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৫১ শতাংশ; মোট আয় আসে ৪৭৩ কোটি ডলার।

চলতি বছরের ১১ মাস শেষে বরাবরের মতই রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তৈরি পোশাক পণ্য ও হোম টেক্সটাইলের। এ সময়ে ৩,৮৫২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে; প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৩৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

১৪৬ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে যাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ শতাশং। তৈরি পোশাক সামগ্রিক রপ্তানির ৮১ দশমিক ৬৫ শতাংশ দখল করে আছে।

এছাড়া চা, সবজি, তামাক, ফলমূল, মসলা ও শুকনো খাবারের মত কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

১১০ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে যাতে প্রায় ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। একইভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১১ কোটি ডলারের যাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০৫ কোটি ডলারের। তবে এখানে এখনও ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক ও জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, মে মাসের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের তুলনায় কম হলেও সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি একটি ক্রমাগত ইতিবাচক প্রবণতায় থাকায় তা ‘সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক’।

তিনি বলেন, “বর্তমানে আমরা কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব, কাঁচামালের বর্ধিত মূল্য এবং বিরাজমান জ্বালানি পরিস্থিতি পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। এছাড়াও উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতা দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি সমস্যা তৈরি করেছে।“

সূত্র : বিডিনিউজ
এম এস, ০২ জুন

Back to top button