ঢাকা, ২৪ মে – ব্যাংক নয়, নেই ব্যাংকিং লাইসেন্সও। তার পরও অবৈধভাবে ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করে ব্যাংকের মতোই আমানত সংগ্রহ ও ঋণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মানুষের সরলতা ও বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক’ (এসটিসি ব্যাংক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
রাজধানীর মালিবাগে কথিত এসটিসি ব্যাংকের কার্যালয়ের সামনে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ করছিলেন ভুক্তভোগীরা।
গতকাল সোমবার সকালেও সেখানে জড়ো হন অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী। প্রতারণার বিষয়টি জেনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মির্জা আতিকুর রহমান ওরফে বিপুল এবং ভাইস চেয়ারম্যান খালিদ হাসান লিটু ওরফে লিটু আনামকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
তবে এর আগেই মালিবাগে লিলি প্লাজায় আতিকুর রহমান ও খালিদ হাসানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা দাবি করছিলেন, সমবায় অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই তাঁরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ১৯৭৬ সাল থেকে।
সেখানে কথা হয় রাজশাহীর তানোরের আয়েজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ির পাশে এসটিসি নামের একটি ব্যাংক খুলছে জেনে চাকরির আশায় আট লাখ টাকা জামানত এবং দুই লাখ টাকা ঘুষ দেন। তাঁকে দেওয়া হয় নিয়োগপত্র। ভালোভাবেই চলছিল তিন মাস। এরপর হঠাৎ উধাও হয়ে যান ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ অন্যরা।
আয়েজুলের মতো আরেকজন হলেন আসমানি খাতুন। আসমানি বলেন, তিনি চাকরির আশায় ৯ লাখ টাকা দেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রানা রহমান মৃধা এবং চেয়ারম্যান মির্জা আতিকুর রহমানকে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই রাজধানীর ঢাকার মালিবাগের লিলি প্লাজায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নিয়োগপত্র নেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই উধাও হয়ে যান ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।
ডিবি সূত্র জানায়, শুধু এঁরা দুজনই নন, ওই ব্রাঞ্চেই এমন ৯ জনের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয় এই চক্র। আর তানোরের মতো রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৫০টি শাখা খুলে এভাবেই সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত ৩০ কোটি টাকা।
পুলিশ সূত্র জানায়, রাজধানীসহ সারা দেশে এসটিসির মতো অন্তত আরো তিনটি এবং কো-অপারেটিভ সমবায় সমিতির নামে শতাধিক প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
সমবায় সমিতি আইন ২০০১-এর ২৩-এর খ ধারায় বলা আছে, কোনো সমবায় সমিতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি এই ধারার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
জানতে চাইলে ডিএমপির ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার এ এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘অন্তত ১৫টি অভিযোগ পেয়েই আমরা এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারে না। এ জন্য সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। আবার এসটিসি সব কিছুই লঙ্ঘন করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এই প্রতারকচক্রের সহযোগী অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই এই দুজন বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এর নেপথ্য মদদদাতাদেরও খুঁজে বের করা হবে। ’
সূত্র : কালের কণ্ঠ
এম এস, ২৪ মে