জাতীয়

রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান টিআইবির

ঢাকা, ০৭ মে – বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের অপরাধে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনা ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে রেলমন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও মন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

এতে উল্লেখ করা হয়, ন্যায়-নিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের কারণে পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট টিটিইকে ত্বরিত বরখাস্তের সিদ্ধান্তে দেশবাসীর কাছে এ বার্তাটিই পরিষ্কার হয়েছে যে, ক্ষমতাবানরাই শুধু নয় বরং তার/তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে থাকা আত্মীয়-পরিজনদের জন্যও আইন প্রযোজ্য নয়। অনিয়মের কাছে মাথানত করেই রুটিরুজি টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপায় বলে মন্তব্য করছে টিআইবি। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে রেলমন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রধরে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ ও নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে।

প্রথমত, রেলমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায় তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা- দেশবাসীর কাছে এ বার্তাটিই পৌঁছেছে যে, ক্ষমতার দাপট ও অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা। এছাড়া এ নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত এখনো গুটিকয়েক যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য একটি শক্তিশালী নেতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে।’

যদিও এ ঘটনায় রেলমন্ত্রী নিজের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন এবং তার আত্মীয় পরিচয়দানকারীদের চেনেন না বলে দাবি করেছেন। একই সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষ টিটিই বরখাস্তের জন্য যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং যার সঙ্গে রেলমন্ত্রীও একমত হয়েছেন। এমন বাস্ততবতায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বিনা টিকিটের সেসব যাত্রী টিটিইকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় কেন দিয়েছিলেন? তাদের সত্যিকার পরিচয় রেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করেছিলেন কি না? অধিকন্তু যাত্রীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ বিষয়ে টিটিইয়ের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রীর পরিচয় কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল? এসব বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

টিআইবি মনে করে যেহেতু রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের জড়িয়ে এজাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে; অধিকন্তু বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীরা রেলমন্ত্রীর পরিচয় ব্যবহার করেছেন, তাই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে নৈতিক অবস্থান থেকে সাময়িক সময়ের জন্য তার পদত্যাগ করা উচিত। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও চাপের ঊর্ধ্বে থেকে সংশ্লিষ্টরা যাতে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্তদের ও দায়িত্ব পালনকারী টিকিট পরিদর্শকের বরখাস্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে নির্বিঘ্নে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এস, ০৭ মে

Back to top button