দাবি আদায়ে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে বড়পুকুরিয়া খনি শ্রমিকরা
দিনাজপুর, ২৯ এপ্রিল – দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় বকেয়া বেতন ও কাজে যোগদানের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল কয়লা খনির ভেতরের ও বাইরের দেশি শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা সরবারাহ গেটের ভেতরে ও বাইয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন শ্রমিকরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল (বুধবার) বেলা ১২টা থেকে খনির মূল ফটকে পরিবারসহ তারা এই বিক্ষোভ ও অবস্থান শুরু করেন শ্রমিকরা।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল তারা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দুই দফা দাবি নিয়ে একটি স্মালকলিপি দেন। দাবি মেনে নিতে বুধবার পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। দাবি না মানায় এই অবস্থান কর্মসূচি করছেন বলে জানিয়েছেন দেশীয় শ্রমিকেরা।
এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভেতরের শ্রমিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক আমিন হোসেন, সেরাজুল ইসলাম, জাকির হোসেন প্রমুখ। অপরদিকে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম, শ্রমিক নেতা মো. সাইফুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
আন্দোলন চলাকালে খনির ভেতরে কাজ করা শ্রমিকদের সাথে দেখা করতে কয়লা সরবরাহ গেটে আসেন শ্রমিকদের স্ত্রী ও সন্তানরা। দেখা করতে আসা নাসরিন আক্তার, শিরিনা, শায়লা আক্তার নামে কয়েকজন শ্রমিকের স্ত্রী জানান, সামনে ঈদ। তাদের স্বামীরা ভেতরে কাজ করছেন। তাদের বাহিরে বের হতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
রবিউল ইসলাম জানান, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে খনিতে মোট এক হাজার ১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন। দুই বছর আগে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে কর্মরত এক হাজার ১৪৭ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪০০ জন শ্রমিককে কাজ করার শর্তে ফেরত নেয়া হয়। বাকি ৭৪৭ জনকে কাজে যোগদানের সুযোগ না দিয়ে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। সামনে ঈদ; ভেতরের শ্রমিকরদের খনির বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ছুটি দেয়ার সময় প্রতি মাসে শ্রমিকদের সাড়ে চার হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিল। ওই টাকা দেয়া শুরুও হয়েছিল। কিন্তু গত আট মাস ধরে তা আর দেয়া হচ্ছে না। তবে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়মিত দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান খান বলেন, ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে বাহিরের ৮৫০ জন শ্রমিকদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে মোট ৫৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। বর্তমানে খনির একটি ফেস চালু রয়েছে যা শেষের পথে। তাই জনবল কম লাগছে। সেইসাথে থাকার জায়গাও কম। আরও একটি ফেস চালু করার প্রস্তুতি চলছে, যা করতে মাস দু-এক সময় লাগবে। ওই ফেসটি চালু হলেই বাহিরের শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে কাজে নেয়া হবে।
ভেতরের শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা খনির বাহিরে বের হয়ে বাড়ি থেকে কাজ করতে চায়।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৯ এপ্রিল ২০২২