দক্ষিণ এশিয়া

ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই ইইউ-ভারত সম্পর্ক জোরদারে সম্মত

নয়াদিল্লি, ২৫ এপ্রিল – ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি কাউন্সিল গঠনে সম্মত হয়েছে ভারত। দিল্লি সফরত ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনের সঙ্গে ভারতের কর্মকর্তাদের আলোচনা শেষে এই ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট দুই দিনের সফরে এখন ভারত আছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপের আঞ্চলিক এই নেতার এটি আকস্মিক সফর। মূলত রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চিড় ধরাতে পাশ্চাত্যের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভন ডার লেন এই সফরকে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া। ইইউ চেষ্টা করছে রাশিয়ার ওপর সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপারে ভারতের নিরর্ভশীলতা কমিয়ে তাদের তৈরি অস্ত্র কেনার ব্যাপারে দেশটিকে রাজি করানো এবং ইইউর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করাই এই সফরের লক্ষ্য। সোমবার এই খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে ইউক্রেনে চালানো রাশিয়ার আক্রমণের প্রতি নিন্দা জানানো থেকে এখনো বিরত রয়েছে ভারত। তবে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। আর ইউক্রেনে চালানো অভিযানকে মস্কো ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে দেখছে।

সোমবার ভারতের সঙ্গে ইইউর যে প্রযুক্তিগত চুক্তি হলো, একই ধরনের চুক্তি ইইউর কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই আছে।

এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সূচনা বক্তব্যে ভন ডার লেন বলেন, আমি মনে করি আজকের এই সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেককিছুর মধ্যে মিল আছে। তবে আমরা চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক অবস্থার মোকাবিলা করছি এখন।

এ সময় তিনি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাণিজ্যে সহযোগিতাকে মনোযোগের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইইউ-ভারত এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, উভয় পক্ষই এই ব্যাপারে সম্মত হয়েছে যে, ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে যৌথ কৌশলগত সম্পৃক্ততার গভীর প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।

বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি কাউন্সিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো এবং রাজনৈতিক নির্দেশনা দিয়ে থাকবে। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী প্রযুক্তিগত কাজের সমন্বয় সাধন করা এবং ইউরোপীয় ও ভারতের অর্থনীতির টেকসই অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন ক্ষেত্রগুলোতে নির্দেশনার বাস্তবায়ন এবং ফলোআপ নিশ্চিতে রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রতিবেদন প্রদান করবে।

ভন ডার লেনের আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভারত সফর করেছেন। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ও বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছেন। তারও আগে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এবং চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভারত সফর করেছেন।

ভারতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আগে ইইউর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, ভন ডার লেনের এই সফরে ভারতকে এই জোটটির সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুনরায় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালুর জন্য চুক্তির ব্যাপারেও আলোচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এদিকে এক টুইটে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, তারা ভারত-ইইউ অংশীদারিত্বের কার্যকর উন্নতির পুনর্মূল্যায়ন করেছেন এবং বাণিজ্য, জলবায়ু, ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা জোরদার এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক জোরদারে সম্মত হয়েছেন।

অন্যদিকে ভন ডার লেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, অর্থনীতি এবং রাজনীতির ওপর ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতবিনিময় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত দেশের মস্কোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অনেক ইউরোপীয় দেশের মতো ভারতও রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২৫ এপ্রিল ২০২২

Back to top button