অপরাধ

প্রতারণার টাকায় গুলশানে হোটেলের মালিক, গুলশানের পাশেই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট!

নুরুজ্জামান লাবু

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল – পেশা তার প্রতারণা! সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করতেন তিনি। ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। টাকা নেওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যেতেন। এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সেই টাকায় ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে একটি আবাসিক হোটেলের মালিকানার অংশীদার হয়েছেন। গুলশানের পাশেই নিকেতনে কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। একজন ভুক্তভোগীর করা মামলায় এই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা দক্ষিণ বিভাগ। প্রতারকের নাম মফিজুল হক। বাবু চৌধুরী নামে তার একজন সহযোগীও গ্রেফতার হয়েছে।

পিবিআই ঢাকা দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামসুজ্জামান বাবু জানান, মফিজুল একজন পেশাদার প্রতারক। সে চাকরি দেওয়ার নামে ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্র জানায়, মোজাফফর হোসেন নামে একজনের কাছ থেকে এই প্রতারক চক্র পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। পরবর্তী সময়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে চাকরি দিতে পারবে না জানিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রলিম্যান হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আরও ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। পরে আরও টাকা লাগবে জানিয়ে এই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোট ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় প্রতারক চক্র।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগী মোজাফফরকে প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী দিতে বলে। একেকজন প্রার্থীকে চাকরি পেতে ১১ লাখ টাকা করে দিতে হবে বললে মোজাফফর তাতে অস্বীকৃতি জানান। এতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা তার আগের প্রার্থীর চাকরি হবে না এবং টাকাও ফেরত পাবে না জানিয়ে হুমকি-ধমকি দিলে তিনি গুলশান থানায় একটি মামলা (নং ৩৯) দায়ের করেন। পরে পিবিআই অনুসন্ধান করে শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাতে গুলশান এলাকা থেকে মফিজুল ও বাবু চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। উভয়ের বাড়ি রংপুরে।

পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মফিজুল হক দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ৩০-৩৫ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। সে প্রত্যেক চাকরি প্রার্থীর বেলায় ৫ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিতো। কখনও চাকরি প্রার্থীদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিতো। কখনও তালবাহানা করে পুরো টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতো। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে।

পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার টাকা দিয়ে মফিজুল গুলশানের হোটেল রীরা’র ১০ শতাংশ মালিকানা কিনেছে। এছাড়া নিকেতন এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে ভূ-সম্পত্তিসহ ঢাকায় একটি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানও চালায় সে।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর মফিজুলের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার নামে চুক্তিপত্র, ব্যাংক চেকসহ গত ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ১১টি প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে।

পিবিআই কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকেও চাকরি দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে মফিজুল। তাকে রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এম এস, ২৫ এপ্রিল

Back to top button