ব্যবসা

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা আকাশপাতাল

ঢাকা, ১০ এপ্রিল – বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা তাদের ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ডলার সংকটে আমদানি করতে না পারায় প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের। লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে না জ¦ালানি তেল। কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ রেখেছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শিক্ষিত জনসংখ্যার দেশটি। প্রস্তুতি ছাড়াই ‘অর্গানিক ফার্মিং’ চালু করায় কৃষি উৎপাদন ধসে যাওয়ায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে।

এই জটিল অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে নেওয়া অপরিকল্পিত বিদেশি ঋণ। বাছবিচার না করে দ্বিপাক্ষিকভাবে ধার নেওয়া ও তা শোধ করতে না পারায় এখন দেউলিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে একসময়ের দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসর অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের নামও উঠে আসছে। এর কারণ বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার মতো অবকাঠামো খাতে বেশকিছু বড় প্রকল্প বিদেশি ঋণে বাস্তবায়ন চলছে। সতর্কতার কারণে এমন আলোচনা উঠলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনা চলে না। একসময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা অগ্রসর অর্থনীতির দেশ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি বড় উদাহরণ। এর বাইরে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প চালু রয়েছে, তার বড় অংশই বহুপাক্ষিক ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব ঋণ একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদি অন্যদিকে এর সুদের হারও নমনীয়। আর প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই যে লাভজনক হবে সে সমীক্ষা করেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনও সন্তোষজনক। তবে অলাভজনক বা কম প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিদেশি ঋণগ্রহণ নিয়ে দেশকে সতর্ক হতে বলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। প্রকল্প ঋণের জন্য কোনো একক দেশ বা সংস্থার ওপর নির্ভরশীল নই আমরা। আমাদের ভালো রিজার্ভ রয়েছে। রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স বাড়ছে। অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে না। ঋণ ব্যবস্থাপনাও ভালো। তাই আমরা মনে করি বাংলাদেশের অবস্থা কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা একরকম দেশ নয়। শ্রীলঙ্কা একটি ছোট দেশ, ছোট ভূখ-। ওদের অর্থনীতি মূলত পর্যটননির্ভর। বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময়। তাছাড়া শ্রীলঙ্কাতে যেটা ঘটেছে, সেটা বাংলাদেশে হঠাৎ করে ঘটার কোনো আশঙ্কা আছে বলে আমি মনে করি না।’

শ্রীলঙ্কায় তামিল গেরিলা ও সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব এবং পরে সেখানে নানা ধরনের দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘কভিডের সময় পর্যটন খাত বড় ধরনের বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশটি আজকের অবস্থানে নেমে এসেছে।’

ড. সালেহউদ্দিন মনে করেন, শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়ার আছে। কারণ এখানে অনেক প্রকল্পে টাকা অপচয় করা হচ্ছে। তাছাড়া যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দেশ থেকে মুদ্রা পাচার হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। দেশে দুর্নীতি বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমানে আমদানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি বেশি থাকায় এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রপ্তানির তুলনায় আমদানি অনেক বেশি। এটাও বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি করছে।’

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার এই আর্থিক দেউলিয়াত্বের ঝুঁকি হঠাৎ করেই তৈরি হয়নি। ২০০৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলো ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, কলম্বোয় সমুদ্রবন্দরের কাছে চাইনিজ সিটি নির্মাণ, রাজাপাকসে বিমানবন্দর নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে একের পর এক সার্বভৌম বন্ড ছেড়েছে। এ ছাড়াও চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই পরবর্তীকালে লাভজনক বিবেচিত হয়নি। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে দ্রুত রিজার্ভ কমে গেছে। চীন থেকে নেওয়া বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটি। চলতি বছর ঋণ পরিশোধের জন্য শ্রীলঙ্কাকে আরও ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করতে হবে। কিন্তু মার্চ শেষে দেশটির হাতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের।

অপরদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের হাতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে ৭-৮ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বেশি স্থিতিশীল। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার শ্রীলঙ্কার অন্তত পাঁচ গুণ। বর্তমানে দেশের জিডিপির আকার হচ্ছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার জিডিপির আকার হচ্ছে ৮১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স কিছুটা কমলেও রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। অবশ্য এ সময়ে আমদানি সংকটে থাকলেও শ্রীলঙ্কার রপ্তানি আয়ও কিছুটা বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় হয় ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স আয় ছিল ৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবে এমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি। তবে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতেও পারে, যদি শ্রীলঙ্কার মতো কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।’ তার মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পদ্মা রেল সেতুর মতো মেগা প্রকল্প কম প্রয়োজনীয়। এরমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পটি ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেটি না হলেও চলত। একইভাবে পদ্মা রেল সেতুরও প্রয়োজনীয়তা কম। তাই এ ধরনের প্রকল্প যদি আরও হাতে নেওয়া হয়, তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হতে বেশি সময় লাগবে না।

২০২১ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হচ্ছে চীনের কাছ থেকে নেওয়া। তবে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হলে শ্রীলঙ্কায় চীনের ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে। শ্রীলঙ্কার ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ নেওয়া হয়েছে সার্বভৌম বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। দেশটি এ বন্ডের ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে। ঋণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে নেওয়া, যার পরিমাণ হচ্ছে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। পুরো বিদেশি ঋণের ১০ দশমিক ৯ শতাংশ নেওয়া হয়েছে জাপানের কাছ থেকে। অবশিষ্ট ঋণ ভারত, বিশ^ব্যাংকসহ অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার দুরবস্থার অন্যতম কারণ হলো, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া। এতে দেশটির বৈদেশিক ঋণের জন্য উচ্চ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের ভারিত (ওয়েটেড) গড় সুদহার ৮ শতাংশের বেশি। অথচ বিদেশি ঋণে বাংলাদেশের এ সুদহার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশই বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে নেওয়া। এসব ঋণের সুদের হার অনেক কম এবং পরিশোধের শর্তও অনেক সহজ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৬০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে সরকারের ঋণ রয়েছে ৫০ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। অবশিষ্ট ঋণের মধ্যে রয়েছে আইএমএফের বাজেট সহায়তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঋণ। আর সরকারের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো শীর্ষে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট বৈদেশিক ঋণ স্থিতির ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের ঋণ নেওয়ার দ্বিতীয় প্রধান উৎস এডিবি। সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশের ঋণ রয়েছে ১১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বৈদেশিক ঋণের ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর ঋণ নেওয়ার তৃতীয় প্রধান উৎস হলো জাইকা। সংস্থাটিতে গত অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের ঋণ স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বৈদেশিক ঋণের ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরের দুটি উৎস হলো চীন ও রাশিয়া। গত জুন শেষে দেশ দুটি থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট ঋণের যথাক্রমে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ চীন এবং ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ রাশিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে। আর রাশিয়ার ঋণের পুরোটাই মূলত একটি (রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ) প্রকল্পে। এর বাইরে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সামান্য কিছু ঋণ নেওয়া হয়েছে।

চীনা ঋণে দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং লাভজনক হয়নি। এটি শ্রীলঙ্কাকে ক্রমবর্ধমান ঋণের মধ্যে ফেলে দেয়। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ২০১৭ সালে ৯৯ বছরের লিজে চীনের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে শ্রীলঙ্কা।

তবে পরবর্তীকালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার। চীন অন্য ঋণগুলো পরিশোধে কোনো ছাড় দিতে অস্বীকার করায় শ্রীলঙ্কার জন্য পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়ে উঠেছে। চীন তার বিশাল ঋণ পুনর্গঠন করার জন্য শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দিতে অস্বীকার করে। অলাভজনক অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বেপরোয়া ধার নেওয়ার শেষ পরিণতিই শ্রীলঙ্কাকে এমন বিপর্যয়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল।

ঋণের ফাঁদে পড়ে দেউলিয়ার মুখে থাকা শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মানও ধারাবাহিকভাবে কমছে। কিছুদিন আগেও এক ডলারে শ্রীলঙ্কার ১৯০ রুপি পাওয়া যেত। অথচ গত দুই মাসে সেটা বেড়ে ৩১৫ রুপি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই টাকার মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে ৮৬ দশমিক ২ টাকা পাওয়া যায়।

ঋণ ছাড়াও শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্ব ঝুঁকি তৈরি করেছে করোনাভাইরাস মহামারী এবং রাতারাতি কৃষি খাতে ‘অর্গানিক ফার্মিং’ চালুর জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সিদ্ধান্ত। করোনার কারণে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত পর্যটন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার পূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া অর্গানিক ফার্মিং চালু করায় খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয়ের মুখে দেশটি। একদিকে উৎপাদন কমে যাওয়া, অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার অভাবে আমদানি করতে না পারায় দেশটিতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। তার ওপর কর ছাড় দেওয়ায় রাজস্বও কমে যায়। উচ্চ খাদ্যমূল্যের কারণে এখন শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ^ পরিস্থিতির কারণে দাম বেড়ে গেলেও মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে ধরে রাখতে পেরেছে।

বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থাগুলোও শ্রীলঙ্কার সার্বভৌম রেটিং আরও নামিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে এসঅ্যান্ডপি শ্রীলঙ্কার রেটিং ট্রিপল সি প্লাস থেকে ট্রিপল সিতে নামিয়ে দিয়েছে। ফিচ ট্রিপল সি থেকে ডাবল সিতে নামিয়েছে শ্রীলঙ্কার ঋণমান। অন্যদিকে এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের সার্বভৌম রেটিং ডবল বি বা বিতে রেখেছে, যা স্থিতিশীল। বাংলাদেশকে একই মানের রেটিং দিয়েছে মুডিসও।

সূত্র : দেশ রূপান্তর
এম এস, ১০ এপ্রিল

Back to top button