পাকিস্তানে স্পিকার বনাম সংবিধান?
ইসলামাবাদ, ০৭ এপ্রিল – পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার সাথে সাথে দেশটির জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার তাকে অর্পিত দায়িত্ব থেকেও সরে গেলেন; কেবল ব্যক্তিগত ক্ষমতা থেকেই নয়, তিনি সরে গেলে যে সম্মানিত পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন, তা থেকেও।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি করেছেন শাহরিয়ার ওয়েন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পক্ষপাতের অভিযোগে বিশ্বজুড়ে সংসদীয় স্পিকাররা জর্জরিত হয়েছেন, হচ্ছেনও। ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের সাবেক স্পিকার জন বারকো ব্রেক্সিট-বিরোধী পক্ষপাতিত্বের কারণে এখনও হাউস অব লর্ডস-এর পিয়ারেজ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত।
যুক্তরাষ্ট্রে হাউসের স্পিকার হিসেবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অত্যধিক পক্ষপাতিত্বের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন ন্যান্সি পেলোসি।
কিন্তু এই সমালোচনাগুলো অবশ্য ফ্যাকাশে হয়ে গেছে গত রোববার ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির দ্বারা (পাকিস্তানের) সংবিধানের নির্মম অপব্যবহারের সামনে, যখন তিনি নির্বিচারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- যেসব বিরোধী দল- যাদের মধ্যে ১৯৭ জনের বেশি সংসদ সদস্য রয়েছেন- সরকারপতন ঘটাতে বিদেশী চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত।
এতে কেবল অনুচ্ছেদ-৫ এর অধীনে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ দাবির সত্যতা সম্পর্কে ব্যক্তিগত রায় দেয়ার সাংবিধানিক অধিকারের ঘাটতিই ছিল না, তিনি একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ভোটদান প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তার দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছিলেন।
তিনি যদি শুধু ইতিহাসের দিকে তাকাতেন, তাহলে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে এবং আইনগতভাবে তার দায়িত্ব পালনের জন্য তার জন্য একটি দুর্দান্ত নজির ছিল।
প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের জানুয়ারির থেকে আর পেছনে ফিরে তাকানোর দরকার নেই, যখন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল। নিশ্চিত নির্বাচনী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে ট্রাম্প তার দীর্ঘদিনের মিত্র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে মার্কিন সংবিধানের সন্দেহজনক পাঠের মাধ্যমে নির্বাচনী গণনা প্রক্রিয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
রিপাবলিকান পার্টি সম্পূর্ণরূপে ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে- যেমন ইমরান খানের অধীনে পিটিআই- প্রেসিডেন্টের আদেশের বিরোধিতা করা পেন্সের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যার সমান ছিল। তবুও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যই তাকে আইনের ব্যত্যয় ঘটাতে বাধা দেয়।
কাসিম সুরি যদি তার বস ইমরান খানের ভয়ে বা প্রকৃতপক্ষে তার নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যিকার অর্থেই পাকিস্তানের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় আঘাত করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬৪২ সালে যখন ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস হাউস অব কমন্স ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিলেন এবং স্পিকার উইলিয়াম লেনথালের সমর্থন দাবি করেছিলেন, তখন রাজার কাছে জমা দিতে অস্বীকার করেছিলেন এই বলে- ‘আমার দেখার না আছে চোখ, না আছে কথা বলা জিহ্বা। কিন্তু এই হাউস আমাকে নির্দেশ দিতে সন্তুষ্ট, এখানে আমি যার সেবক হিসেবে আছি।’ (সংক্ষেপিত)
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৭ এপ্রিল ২০২২