নাটক

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাতামাতি আমার পছন্দ না: কেয়া পায়েল

ঢাকা, ০৭ এপ্রিল – চার বছর আগের কথা। দুরু দুরু বুকে ক্যামেরার সামনে হাজির হয়েছিলেন এক কিশোরী। সেখানে পা রেখেই যেন টের পেলেন তিনি থাকতে এসেছেন; আপন ছন্দে। এসেছেন নতুন রঙে রাঙাতে। ঘটেছেও তাই। টোল পরা গালে হাসি ছড়িয়ে সহসাই নিজের একটা জায়গা যেন পাকা করে নিয়েছেন। তিনি কেয়া পায়েল। টেলিভিশন নাটক-টেলিছবি, বিজ্ঞাপনের এই হাসিমাখা মুখের মেয়েটির সরব উপস্থিতি বিমোহিত করে রেখেছে অগণিত দর্শককে। প্রথমে অভিনয় নিয়ে কোনো স্বপ্টম্নই ছিল না তার। তারপরও পায়েল এখন ব্যস্ত অভিনেত্রী। সেই পায়েলের অভিনয়ের শুরু কীভাবে? ‘সত্যি বলতে কি প্রথমে অভিনয়ের কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। একেবারে হুট করেই মিডিয়ায় এসেছি। শখের বশে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করি। এটি প্রচারের পর সংগীতশিল্পী তাহসান, হাবিব ওয়াহিদ ও ইমরান মাহমুদুলের গানে মডেল হয়েছি। সবকিছু মিলে মিডিয়ার মানুষজনের সঙ্গে টুকটাক পরিচয় ঘটে। এরপরই একের পর এক অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। নাটকেও কাজ শুরু করি। ক্যারিয়ারের প্রথম বছরেই প্রায় সব তারকা অভিনেতার বিপরীতেই অভিনয় করেছি। এ যেন পরম পাওয়া। নিয়মিত শুটিং করব, অভিনয় দিয়ে এত পরিচিত পাব, এটা কখনও ভাবিনি।’- বলেন কেয়া পায়েল।

উজ্জ্বল মহিমায় দর্শকের সামনে আসতে সবসময় তিনি বদ্ধপরিকর। তাই তো অনেক কাজের প্রস্তাব পেলেও খুব বেছে বেছে, দেখে শুনে কাজে হাত দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছেন চিত্রনাট্য, সহশিল্পী ও নির্মাতার গুণমানকে। চলচ্চিত্রকে মিডিয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে গণ্য করে থাকেন অনেকেই। কেয়া পায়েলও তা মানেন। তবুও এ মাধ্যমে বুঝেশুনে পা ফেলতে চান তিনি। ২০১৮ সালের শেষে আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে ‘ইন্দুবালা’ সিনেমায় নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও যথাযোগ্য চিত্রনাট্য কিংবা পারিপার্শ্বিকতার কারণে এখনই নিজেকে খুব একটা অঙ্গনে জড়াতে রাজি নন তিনি। তবে চলচ্চিত্রে এ সময়ে তারুণ্যের প্রতিফলন রয়েছে- এ বিষয়টি তাকে ভীষণ আশাবাদী করে।

চার বছরের ক্যারিয়ারে ‘রূপকথার রঞ্জনা’, ‘অবুঝ মন’, ‘তিরন্দাজ’, ‘ট্রাম্পকার্ড’, ‘মনের আড়ালে’, ‘বিয়ের সাইড এফেক্ট’, ‘শুভ + নীলা’, ‘উড়ছি তোমার প্রেমে’, ‘পারব না ভুলতে তোকে’, ‘হৃদ মাঝারে’, ‘পাঁচ ভাই চম্পা’সহ তার অনেক কাজ প্রশংসিত হয়েছে। একক নাটকের পাশাপাশি ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। কোন ভাবনা থেকে এ ধারাবাহিকে অভিনয়ে আগ্রহী হলেন? ‘কখনও ভাবিনি ধারাবাহিকে কাজ করব। আমি একক নাটক নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এতে কাজে অনেক সময় দিতে হয়। পারিবারিক গল্পের নাটকটি পছন্দ হয়েছে। রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় নাটকে আমার চরিত্র যৌথ পরিবারের এক সাধারণ মেয়ের। গল্প ও চরিত্রই আমাকে নাটকের কাজে আগ্রহী করেছে।’

যে কোনো উৎসব আয়োজনে কেয়া পায়েল থাকেন সরব। আসছে ঈদের জন্য এরই মধ্যে মিফতা আনানের পরিচালনায় ‘সুইটি আই লাভ ইউ’ নাটকে তৌসিফ মাহবুবের বিপরীতে, জাকারিয়া সৌখিনের ‘চলন বাহার’ নাটকে জোভান আহমেদের বিপরীতে, মহিদুল মহিমের ‘নসিব’ নাটকে মুশফিক আর ফারহানের বিপরীতে ও রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় অপূর্বর বিপরীতে ‘রঙঢঙ’সহ আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ঈদ আয়োজনে রোমান্টিক, কমেডি, সিরিয়াসসহ সব ধরনের গল্পের ডজনখানেক নাটক ও কিছু টেলিছবিতে তাকে দেখা যাবে বলে জানান তিনি। কাজগুলো নিয়ে আশাবাদী এই অভিনেত্রী।

নিজেকে সবসময় হাসিখুশি রাখেন কেয়া পায়েল। এ হাসিখুশি থাকার মন্ত্র কী- মুখে এক চিলতে হাসি নিয়েই উত্তরটা দিলেন তিনি। তার কথায়, ‘আমি সবসময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। যদি মন থেকে ভালো থাকা যায় শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলে হাসি দিয়ে কথা শুরু করি। আমার মুখে হাসি লেগেই থাকে। এর মধ্যে আমি তৃপ্তি খুঁজে পাই।’

অভিনয়ের পাশাপাশি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়ছেন কেয়া পায়েল। নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে দেখতে চান এই অভিনেত্রী। চঞ্চল প্রকৃতির মেয়েটির ধুলোমাখা শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে সাভারের আশুলিয়ায়। শাবানা, শাবনূর, জয়া আহসান ও অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের ভক্ত তিনি। অবসরে দেশ-বিদেশের প্রচুর সিনেমা দেখেন। কাজের কথা অনেক হলো, এবার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রেম, বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন? ‘ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাতামাতি করতে পছন্দ করি না। গুঞ্জনের শিকার হতে চাই না বলেই সচেতনভাবে বুঝেশুনে চলার চেষ্টা করছি। অনেকবারই বলেছি, আমি কোনো প্রেমের মধ্যে নেই [হাসি]। অভিনয়ই মন দিয়ে করার চেষ্টা করছি। আর বিয়ে তো করবই। সবে তো ক্যারিয়ার শুরু। আরও চলুক। পড়াশোনা শেষ হোক। তারপর যখন মনে হবে আমার জীবনে কাউকে প্রয়োজন, তখন হয়তো বিয়ে নিয়ে ভাবব।’

ক্যারিয়ারের এই অল্প সময়ে দর্শকের কাছে অনেক ঋণ জমা হয়ে গেছে তার। এই বোধটুকু এই সুহাসিনী মডেল-অভিনেত্রীকে রীতিমতো রোমাঞ্চিত করে এবং একই সঙ্গে নতুন ও ভালো কাজ করার উৎসাহ জোগায়। তাই সবসময় তিনি স্বপ্টম্ন বুনছেন অভিনয় ও মডেলিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার। রংধনুর মতো সাতরং ছড়িয়ে আপন ছন্দে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছেন কেয়া পায়েল।

এম এস, ০৭ এপ্রিল

Back to top button