দেশের কোন আইনে আছে টিপ পরা যাবে না: সুবর্ণা মুস্তাফা
ঢাকা, ০৩ এপ্রিল – রাজধানীর ফার্মগেটে কপালে টিপ পরা এক শিক্ষিকাকে হেনস্তা করার ঘটনা নিয়ে জাতীয় সংসদে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের কোন সংবিধানে বা কোন আইনে লেখা আছে যে একজন নারী টিপ পরতে পারবে না? এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এমনকি সে বিবাহিত না বিধবা সেটা বিষয় নয়।
রোববার (৩ এপ্রিল) সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে যথাযত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রলায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একসময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী।
তিনি আরও বলেন, একটি মেয়ে টিপ পরেছে। তিনি একজন শিক্ষিকা। রিকশা থেকে নামার পর দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার তাকে ইভ টিজ করেছে। যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকেই ইভ টিজারের ভূমিকায় দেখি, তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর ব্যাপার।
টিপ পরার কারণে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার পুলিশের পোশাক পড়া এক ব্যক্তি দ্বারা দ্বারা হেনস্তার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তার ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার (২ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনে আসেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটেই নিজ কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজে যাচ্ছিলেন। হাটতে হাটতে সেজান পয়েন্টের সামনে পর্যন্ত আসার পর একটি থেমে থাকা মোটরসাইকেলের উপর পুলিশের পোশাক পরিহিত বসে থাকা এক ব্যক্তি তার কপালে টিপ পরা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তার বাজে মন্তব্য নিয়ে ঐ নারী প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন পুলিশের পোশাক পরিহিত ঐ ব্যক্তি। তাকে উদ্দেশ্য করে ‘টিপ পরছোস কেন’ মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি। এক পর্যায়ে পুলিশের ওই সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে তার গায়ের উপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও জানান ভুক্তোভুগী ঐ নারী।
শনিবারের এই ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ওই নারী প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে তুইতোকারি করা হয়, অসম্মান করা হয়েছে তাকে। আমি সরকারি দলকে রিপ্রেজেন্ট করি না বিরোধী দলকে রিপ্রেজেন্ট করি- বিষয়টা এগুলোরও ঊর্ধ্বে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন, মানুষ আগে। মানুষের অধিকার আগে। জাতির পিতা বলেছেন, মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের অধিকার আগে।
এই সাংসদ আরও বলেন, ইভটিজিং আমরা শুনে এসেছি। বখাটে ছেলেরা স্কুলের বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের ইভটিজিং করে। সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু আমি যখন দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীদের কাউকেইউ ইভ টিজারের ভূমিকায় দেখি তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান রুপালি পর্দার এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভেনেত্রী।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৩ এপ্রিল ২০২২