অপরাধজাতীয়

টিপু হত্যাকাণ্ডে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি

ঢাকা, ০২ এপ্রিল – ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে ক্ষমতাসীন দলটিরই স্থানীয় এক নেতাকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। তিনি হলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।

তিনিসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল-মঈন বলেছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে টিপু হত্যাকাণ্ড ঘটে।

গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- নাসির হোসেন ওরফে কিলার নাসির, সালেহ সিকদার ও পলাশ।

এর আগে ওই হত্যা মামলায় মাসুম মোহাম্মদ আকাশ ও আরফান উল্লাহ দামাল দুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ; যারা এখন রিমান্ডে রয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সব মিলিয়ে ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ২০১৩ সালে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাকাণ্ড হয়। আসামিদের চারজনই মিল্কীর অনুসারী। তারা বিশ্বাস করেন, মিল্কী হত্যাকাণ্ডে জাহিদুল ইসলাম টিপু জড়িত। মিল্কী হত্যার পরে বিচারের দাবিতে টিপুর বিরুদ্ধে পোস্টারিং, মিছিল, মানববন্ধন, আলোচনাসভা করে গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা। পরে আদালতে টিপু অব্যাহতি পাওয়ায়, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

হত্যাকাণ্ডের আরেকটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দলটি ২০১৬ সালে রিজভী হাসান ওরফে ‘বোঁচা বাবু’কে হত্যা করে। বাবু ছিলেন টিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাবু হত্যা মামলায় পুলিশ গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে তিনজন ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ের অপেক্ষায় আছে। সে মামলায় অভিযোগপত্রে থাকা ব্যক্তিরা মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্যা পলাশকে সুরতহাল সাক্ষী বানায় মামলার গতিপথ পাল্টানোর জন্য।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক আরও বলেন, বোঁচা বাবুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেছিল তার বাবা আবুল কালাম। কিন্তু মামলার যাবতীয় খরচসহ সবকিছু দেখভাল করছিল জাহিদুল ইসলাম টিপু। আসামিরা ৫০ লাখ টাকা দিয়ে মামলার দফারফার জন্য টিপুকে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু টিপু রাজি হননি। গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের দাবি, টিপুর কারণেই মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে গেছে এবং বিচার দ্রুত হচ্ছে। আসামিদের আশঙ্কা ছিল, এ মামলায় তাঁদের কারও ফাঁসি হবে। তাই মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে প্রথমে মামলার বাদী আবুল কালামকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে আসামিরা ভেবে দেখলেন, বাদীর পরিবর্তে টিপুকে হত্যা করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে।

খন্দকার আল মঈনের বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম কিলার সুমন শিকদার মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেয় ওমর ফারুক।

উল্লেখ্য, ঢাকার শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় ২৪ মার্চ রাতে অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। তার মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি ছোড়ে হেলমেটধারী আততায়ী।

ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ সেরে হামলাকারী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০২ এপ্রিল ২০২২

Back to top button