ইউরোপ

কিয়েভ ও চেরনিহিভে কেন সামরিক তৎপরতা কমাচ্ছে মস্কো

মস্কো, ৩০ মার্চ – তুরস্কের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার পর পরই ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাশিয়া।

মস্কো বলছে, তারা রাজধানী কিয়েভের চারপাশে এবং উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরে তাদের সামরিক তৎপরতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে দেবে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে সবচেয়ে ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়ার ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্দার ফোমিন বলেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করা এবং আরো সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা।

তুরস্কে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুলত কাভুসগলুও বলেছেন যে, আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে এবারই উল্লেখযোগ্য রকমের অগ্রগতি ঘটলো।

রাশিয়ার কর্মকর্তারাও বলেছেন যে এই আলোচনা এখন এক বাস্তব পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।

কিয়েভের ওপর রাশিয়ার সামরিক আক্রমণের পরিকল্পনা অনেকদিন ধরেই থমকে আছে। ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধের মুখে রাজধানীর আশেপাশের কিছু জায়গা থেকে রুশ বাহিনী ইতোমধ্যে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মারিউপোলসহ যেসব জায়গায় বড় ধরনের সংঘর্ষ হচ্ছে সেসব জায়গার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

সংবাদদাতারা বলছেন, ইস্তাম্বুলের শান্তি সংলাপে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলটি বলেছে যে, তাদেরকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়া হলে পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে যোগ না দিয়ে তারা নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এটাই রাশিয়ার প্রধান দাবি।

রাশিয়ার প্রতিনিধি দলটি বলেছে যে, তারা এ প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে পৌঁছে দেবেন। রাশিয়ার ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্দার ফোমিন শান্তি আলোচনায় অংশ নেন।

রুশ টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা এবং পরমাণু-মুক্ত মর্যাদা এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে’ অগ্রগতি হয়েছে।

এর পরই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামরিক তৎপরতা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনার কথা ঘোষণা করে।

ইউক্রেন পক্ষের মধ্যস্থতাকারী ওলেকসান্দার চ্যালি রিপোর্টারদের বলেছেন, তাদের দেশের ‘ভৌগলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্যেই ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তা অর্জন করা হবে।’

ইউক্রেন বলছে, কিয়েভ ও চেরিনিহিভ- এই দুটো জায়গা থেকে রুশ সেনা কমিয়ে আনার লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছেন। তবে তারা বলছেন, নতুন সেনা মোতায়েন রাশিয়ার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মধ্যে সামনাসামনি একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

শান্তি আলোচনায় এ অগ্রগতির খবরে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে। প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টে শেয়ারের দাম তিন শতাংশেরও বেশি বেড়ে যায়। লন্ডনের ফুটসি শেয়ার ইনডেক্সও এক দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রেও লেনদেনের শুরুতে শেয়ারের দাম বেড়েছে।

শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির খবর সত্ত্বেও ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় আজ মঙ্গলবারেও লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

চেরনিহিভ শহরের প্রশাসন জানিয়েছে, শহরে রুশ সেনারা রকেট হামলা চালিয়েছে। শহরের মেয়র বলছেন, লড়াই শুরুর পর চারশ মানুষ সেখানে মারা গেছে।

দক্ষিণের মিকোলাইভ শহরের প্রশাসনিক ভবনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। উত্তরের লুহানস্ক এবং দনিয়েস্কে লড়াই চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এস, ৩০ মার্চ

Back to top button