জাতীয়

মঙ্গলবার বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে শেষ হল হরতাল

ঢাকা, ২৮ মার্চ – বিচ্ছিন্ন সংঘাতের মধ্য দিয়ে সোমবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পিকেটারদের লাঠিচার্জ, গরম পানি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ছাড়া নেতার্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় সারাদেশে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে দাবি করেছে বাম দলগুলো। হরতাল পালন শেষে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বামজোট।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা বন্ধ ও জনজীবনের দুর্ভোগ নিরসনের দাবিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল ডাকা হয়েছিল। পরে বামজোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একই দিন সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপি, বাংলাদেশ জাসদ, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন এই হরতালে ‘নৈতিক সমর্থন’ দেয়।

সকাল ৬টা থেকেই রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও গুলিস্তান এলাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে ও বিক্ষোভ মিছিল করে হরতাল পালন শুরু করেন জোট নেতাকর্মীরা। রাজধানীর অন্যত্র পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটসহ সবকিছু পুরোদমে চালু থাকায় জনজীবনে আর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

পুরান পল্টন মোড়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে বামজোটের শরিক সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিছিল করেন। সেখানে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। এ সময় যান চলাচলে পিকেটারদের বাধা দেওয়া নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান নেতাকর্মীরা। পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়।

সকাল সাড়ে ১১টায় পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট বিক্ষোভ সমাবেশ করে। জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহ আলম, বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকি, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, মাসুদ রানা, মোশরেফা মিশু, ইকবাল কবির জাহিদ, আবদুল আলী, আবদুল্লাহ কাফি রতন, বাচ্চু ভূঁইয়া প্রমুখ।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে সাইফুল হক পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিলে নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জসহ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান দিয়ে গরম পানি ছোড়ে। এতে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতুসহ ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে নেতারা দাবি করেন। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলেও দাবি করেন তারা।

তবে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, সংঘর্ষে চার-পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সাইফুল হক বলেন, হরতালে মানুষ স্বতঃস্ম্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে।

হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। কাঠ ও ব্যানার পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। সকাল ১১টায় অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল করে পল্টনের দিকে চলে যান নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ মিরপুর থেকে ৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে বাম জোটের দাবি।

ঢাকার বাইরে সারাদেশে হরতাল ছিল ঢিলেঢালা। খুলনায় হরতালের সমর্থনে মিছিলের প্রস্তুতিকালে পুলিশ কমপক্ষে আট নেতাকর্মীকে আটক করে। পরে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের লাঠিচার্জে ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজারে সীমিত পরিসরে হরতাল পালিত হয়েছে বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২৮ মার্চ ২০২২

 

Back to top button