জাতীয়

ভারতের ভিসা চালু হলে চলবে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’

ওবায়দুর মাসুম

ঢাকা, ২৭ মার্চ – বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকবলসহ ‘যাবতীয় প্রস্তুতি’ থাকলেও ভারতের ভিসা দেওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় চালু হয়নি আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন।

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেনটির চলাচল শুরু করতে গত সপ্তাহেও বৈঠক করেছে রেলওয়ে। আলোচনা হয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গেও।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার গত বৃহস্পতিবার জানান, দ্রুত ট্রেনটি চালু করার চেষ্টা চলছে, ভিসার জন্য বিষয়টি আটকে আছে।

“ভারত আমাদের বলেছে তারাও ট্রেনটি চালাতে চায়। কিন্তু এজন্য কিছু ফরমালিটিজ আছে। ভারত যদি ভিসা না দেয় তাহলে সেখানে কারা যাবে, যাত্রী কোথা থেকে আসবে।”

ট্রেনটি চালুর বিষয়ে গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি চিঠিতে বলা হয়, শিগগির মিতালী এক্সপ্রেস চালু করা হবে। চিঠির অনুলিপি রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হয়।

এরপর ট্রেনটি উদ্বোধনের এক বছর পর এবারের স্বাধীনতা দিবসে চালু হবে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়। তবে শনিবার ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় তা যাত্রা শুরু করেনি।

২০২১ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধন করেন। মহামারীসহ নানা কারণে ট্রেনটি এতদিন চলাচল শুরু করতে পারেনি।

এই ট্রেন সেবা চালু হলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যাতায়াত বাড়ার পাশাপাশি রেলওয়ের আয়ও বাড়বে জানিয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, “ভারতে অনেক রোগী, পর্যটকরা যায়। শিক্ষার্থীরা আসে-যায়।

“এখন মানুষ বিমানে যাচ্ছে, অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বিমানে হঠাৎ করে ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু রেলে তো এই সমস্যা নেই। যতই চাহিদা বাড়ুক ভাড়া বাড়বে না। ট্রেনটি চালু হলে তারা স্বচ্ছন্দে যেতে পারবে।”

মিতালী এক্সপ্রেস কবে নাগাদ চালু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এখনও সম্ভাব্য কোনো দিন ঠিক করি নাই। সবকিছু ঠিক কয়েকদিন আগে আমরা জানাব।”

ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, মিতালী এক্সপ্রেস চালুর বিষয়ে গেল সপ্তাহে বৈঠক করেছে রেলওয়ে। এছাড়া গত বুধবার ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে ভিসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“ভারতীয় হাইকমিশনার আমাদের এখানে এসেছিলেন, তাদের বলেছি তারা ভিসা চালু না করলে আমরা যাত্রী কোথায় পাব। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, ভারতীয় রেলও তাদের দিক থেকে প্রস্তুত।

“কিন্তু ইমিগ্রেশন, ভিসা এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ করতে হবে। বিষয়টি আমরা জানিয়ে দিয়েছি।”

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার শনিবার জানান, ভিসা ছাড়াও করোনাভাইরাস প্রটোকল সংক্রান্ত বিষয়ের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।

তিনি বলেন “এখন ট্যুরিস্ট এবং মেডিকেল গ্রাউন্ডে ভিসা দিচ্ছে। ভারতের ভিসার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে গেলে রেলওয়ের অপশনটি এখনও আসছে না। সফটওয়্যারে ওই বিষয়টি এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।”

কোভিড প্রটোকল সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রটোকলে বলা হয়েছে যাত্রীদের আরটিপিসিআর টেস্ট লাগবে। কিন্তু আমরা জানি করোনাভাইরাসের পূর্ণ ডোজের সনদ জমা দিলেই হয়।

“এটা আগের প্রটোকল ছিল, নতুন করে আবার তা আপডেট হয়েছে। আমরা আপডেটেট সুবিধাটা নিতে চাচ্ছি।”

ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল শুরু করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘ট্রেন, লোকবল সব প্রস্তুত’ বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ট্রেনটি চালুর বিষয়ে গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি চিঠিতে বলা হয়, শিগগিরই মিতালী এক্সপ্রেস চালু করা হবে। চিঠির অনুলিপি রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগে পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সপ্তাহে চারদিন এ ট্রেন চলবে। ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ছাড়বে প্রতি রবি ও বুধবার।

আর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়বে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। যাত্রাপথে ভারতের হলদিবাড়ি এবং বাংলাদেশের চিলাহাটি স্টেশনে থামবে মিতালী এক্সপ্রেস।

ট্রেনটি ভারতীয় সময় বেলা পৌনে ১২টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে আসবে। ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌঁছবে বেলা ১টা ০৫ মিনিটের মধ্যে।

বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে আসবে চিলাহাটি স্টেশনে। সেখান থেকে ঢাকায় পৌঁছবে রাত সাড়ে ১০টায়। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি আবারও ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

পরদিন চিলাহাটি পৌঁছুবে ভোর পৌনে ৬টায়। ভারতীয় সময় সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি হলদিবাড়ি যাবে, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে সকাল সোয়া ৭টায়।

ট্রেনে চারটি এসি বার্থ এবং চারটি এসি চেয়ার কোচ থাকবে। এছাড়া ব্রেকভ্যানসহ দুটি পাওয়ার কারও রয়েছে। সব মিলিয়ে ‌১০টি কোচ থাকবে। সেখানে ১৪৪ এসি সিট, ৩১২ এসি চেয়ার এবং ৯৬টি এসি বার্থ থাকছে।

এসি বার্থ সিটের ভাড়া হবে বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা এবং এসি চেয়ার শ্রেণির প্রতি যাত্রীর ভাড়া হবে ২ হাজার ৭০৫ টাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীদের ভাড়া হবে টিকেটের মূল্যের অর্ধেক।

সূত্র : বিডিনিউজ
এন এইচ, ২৭ মার্চ

Back to top button