জাতীয়

রাজনীতির মাঠে নতুন কর্মকৌশলে এগোনোর চিন্তা করছে জাতীয় পার্টি

ঢাকা, ০৯ অক্টোবর- করোনাকালে দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাকযুদ্ধে লিপ্ত থেকে গরম রেখেছে রাজনীতির মাঠ। এ সুযোগে সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি নতুন করে ছক কষছে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে দলটি দেশের রাজনীতিতে অন্যতম শক্তি হিসেবে টিকে ছিল। ক্ষমতায় ছিল আট বছর। আবার দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা থেকে রাজনীতির মাঠে নতুন কর্মকৌশলে এগোনোর চিন্তা করছে জাতীয় পার্টি। আর সেটি শুরু হচ্ছে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেই।

এ নির্বাচনে সারা দেশেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে চেয়ে আছে। আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ এসেছে তাদের। জাপার ক্ষমতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রয়েছে।

জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড মজবুত ও গতিশীল করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেজন্য করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দীর্ঘ সময় ধরে সশরীরে উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত বৈঠক করে দলকে চাঙ্গা রাখছেন। ঘরে বসে না থেকে রাজধানীর পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান।

জাপা সূত্র জানায়, দলকে চাঙ্গা করতেই সম্প্রতি মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। অতীতে পার্টিতে ঘটে যাওয়া নানা বদনাম, ঘটনা-রটনা মোচনে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের মহাসচিব পদে রুহুল আমীন হাওলাদারের স্থলাভিষিক্ত করেন মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। আড়াই বছর পর তাকে সরিয়ে বাবলুকে মহাসচিব পদে ফেরান জি এম কাদের।

আরও পড়ুন: তেরো হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ১০ কিলোমিটারের ভোলা সেতু

পাটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাপা এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়। দলে বিভেদ-বিদ্বেষ নেই। দল এখন আরো ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, আগামীতেও দেশের রাজনীতির ময়দানে অন্যতম ‘শক্তি’ হিসেবে লড়াই চালিয়ে যাবে জাপা। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে চাঙ্গা করা হবে।

এখনকার জাতীয় পার্টি কেমন চলছে এই প্রশ্নে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, জাপা এখন অনেক উজ্জীবিত একটি রাজনৈতিক দল। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার জন্য দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। দলে কোনো বিভাজন নেই।

জানা গেছে, দলের ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। শিগগিরই সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সারা দেশে কাজ করবে জাপার ওয়ার্কিং কমিটি। আর সারা দেশে দ্রুত সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিবদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন জাপা চেয়ারম্যান। এরপর কো-চেয়ারম্যানদের নিয়েও বৈঠক করছেন তিনি। ওইসব বৈঠকে পার্টিকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলীয় সূত্রও জানায়, বর্তমান জাপার কমিটিতে তরুণদের প্রাধান্য বেশি। তাই সামনে সাংগঠনিক কর্মসূচি আরো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, করোনার ভয়ে বিভিন্ন দলের সিনিয়র নেতারা যখন অনেকটা ঘরবন্দি ছিলেন, তখন ভয়কে জয় করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের কর্মকান্ডে সশরীরে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীসহ দেশের সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছেন জি এম কাদের। দলে এনেছেন সাংগঠনিক গতি।

জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিক সক্ষমতার পরিচয় দিতে চায়। এজন্য সারা দেশেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। যেসব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে যোগ্য দলীয় প্রার্থী পাওয়া যাবে, তাদের দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব এলাকায় জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য রয়েছেন এবং সাংগঠনিক অবস্থাও শক্তিশালী, সেসব স্থানের প্রার্থী জয়ী করতে বিশেষ উদ্যোগও নেবে দলটি।

নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলেন, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দলীয় প্রতীকে একেবারেই তৃণমূলপর্যায়ে ভোট হওয়ায় এ নির্বাচনে দলের মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ আসছে। ওই সুযোগ কাজে লাগাতে সব ধরনের কৌশল নিয়ে মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে সারা দেশেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করব। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও জনপ্রিয় এবং যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-অপরাধের অভিযোগ নেই, এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা প্রমাণ করব, মাঠপর্যায়ে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা আছে, সাংগঠনিক শক্তিও আছে। জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো জোটগত নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আলোকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ০৯ অক্টোবর

Back to top button