জাতীয়

সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কে এই আমির হামজা

মাগুরা, ১৫ মার্চ – সাহিত্যে অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক পাওয়া মো. আমির হামজা কে- তা নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাহিত্য অঙ্গন সংশ্নিষ্টদের বিস্ময়ভরা জিজ্ঞাসা, কে আমির হামজা ! কোন সাহিত্যের জন্য তিনি স্বাধীনতা পদক পেতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০২২ সালের স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছে। বাকিরা জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত হলেও মাগুরার চারণ কবি আমির হামজা তেমন নন।

আমির হোসেনের স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তিতে বিস্মিত হয়ে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘তিনি কে? তাকে চিনি না। তার সাহিত্য সম্পর্কেও ধারনা নেই।’

একই কথা বলেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ার সৈয়দা হক।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, তিনি আমির হামজা নামের সাহিত্যিকের নাম শোনেননি।

২০২০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মেদ মনোনীত হয়েছিলেন। তিনিও জাতীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন না। সমালোচনা ও বিতর্কের পর পদক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

পদক তালিকায় নাম আসার পর খোঁজ করে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মারা গেছেন। ২০১৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাঘের থাবা’ প্রকাশিত হয়। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ৩৫ টি কবিতা এবং ৩৬টি গান আছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় গীতিকাব্যগ্রন্থ ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’। গানগুলো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা। একুশের পাঁচালী নামে প্রকাশিত আরেকটি বই প্রকাশিত হয়।

আমির হামজার জন্য মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়নের বরিশাট গ্রামে ১৯৩১ সালের ৩ মে। তার বাবা ইমারত সরদার। মা আবিরণ নেছা। শৈশবে বাবাকে হারানোর কারণে কারণে লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেননি। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন। কবিতা লিখতেন। নিজের লেখা সুর করতেন। কবিগান, পালাগানের মঞ্চে নিজেই গাইতেন। স্থানীয় আকবর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার অধীনে আমির হামজা সরসারি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।

আমির হামজার ১০ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়জন মোঃ আছাদুজ্জামান। ২৪তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্ত খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনিই বাবার হয়ে স্বাধীনতা পদকের জন্য আবেদন করেছিলেন। যাতে সুপারিশ করেছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। আছাদুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এককভাবে কবি আমির হামজার মত এত গান ও কবিতা আর কেউ লিখেননি। তার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।

আমির হামজা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতায় লিখেছেন, ‘‘যে ক্ষতি পারোনা তুমি করিতে পূরণ,/ কেন সেই মহাপ্রাণ করিলে হনন।/কারে নিয়ে বল আজ কবিতা লিখি/একটি মুজিব এনে দাও তো দেখি।’

শেখ হাসিনা নিয়ে কবিতায় তিনি লিখেছেন, ‘আবারো ভাসিছে আযানের ধ্বনি/ শেখ হাসিনার আহ্বান/ ক্লান্ত শ্রমিক, মাঝিরা, চাষিরা/ফিরিয়া পেয়েছে প্রাণ/ সে যে শেখ হাসিনার আহ্বান/শত বাহুতুলে হাসিছে শাপলা বাংলার সরোবরে।’

আমির হামজার প্রথম বইয়ের প্রকাশক ছিল মাগুরার শ্রীপুরের সারথি কল্যাণ ফাউন্ডেশন। এর সভাপতি শিকদার মঞ্জুর আলম বলেন, চারণ কবি আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে তারা আনন্দিত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা এবং প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যকরা আমির হামজার অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মাগুরার সুরধ্বনি সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালক কবি বাসনা রায় বলেন, ‘আমরা ছোট শহরে কিংবা গ্রামে থাকি, তাদের প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ কম থাকে।’

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, সাহিত্যে স্বাধীনতা পদকের তালিকা দেখে তিনি বাংলা একাডেমির লেখক অভিধানে আমির হামজার নাম খোঁজ করে পাননি। স্বাধীনতা পদকের মতো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়ার নির্বাচন প্রক্রিয়া রয়েছে। দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সবকিছু যাচাই বাছাই করে পুরস্কারের জন্য নাম সুপারিশ করেন। সাহিত্যে আমির হামজা নাম দেখার পর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কারা আছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াটা কী তা জানার ইচ্ছে বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের প্রত্যেকে ১৮ ক্যারেট সোনার ৫০ গ্রাম ওজনের পদক এবং পাঁচ লাখ টাকা করে পাবেন। জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে এই পদক দিচ্ছে সরকার।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৫ মার্চ ২০২২

Back to top button