ব্যবসা

সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৩ শতাংশ : বিএফআইও

ঢাকা, ১৫ মার্চ – সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের রিপোর্টিং বেড়েছে উচ্চহারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউতে ২০২০-২১ অর্থবছর ব্যাংকসহ বিভিন্ন রিপোর্টিং এজেন্সি ৫ হাজার ২৮০টি সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) এবং সন্দেজনক কার্যক্রম রিপোর্ট (এসএআর) করেছে। এর আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৬৭৫টি।

এদিকে ই-কমার্স প্রতারণা ও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিএফআইইউর সঙ্গে রেকর্ড এক হাজার ৪১৪টি তথ্য বিনিময় করেছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৭৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মঙ্গলবার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এ উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বিএফআইইউর প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ, বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক এ.বি.এম. জহুরুল হুদা, ডিজিএম কামাল হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ব্যাংকসহ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সচেতনতা সন্দেহজনক লেনদেন রিপোটিং বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া ই-কমার্সে প্রতারণার অভিযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য খাতে করোনাকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গুমাধ্যমে প্রচুর খবর এসেছে। এগুলো রিপোর্টিং সংখ্যা বাড়াতে প্রভাব রেখেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিএএফআইইউ প্রধান জানান, অর্থপাচারের তথ্য জানলেও প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক সংস্থার বিধিনিষেধের কারণে তা প্রকাশ করা যায় না। আবার কত টাকা পাচার হয় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যও বিএফআইইউর কাছে নেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসব তথ্য প্রকাশ কওে, তা যে সব ক্ষেত্রে পাচার নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। বিধিনিষেধ অমান্য করে তথ্য প্রকাশ করায় কয়েকটি দেশ সদস্য পদ হারিয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিক ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ডিজিটাইজেশন হচ্ছে। এতে করে নতুন বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় বিএফআইইউ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আসছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বরাবরের মতো এসটিআরের বেশিরভাগই এসেছে ব্যাংক থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে শুধু ব্যাংকগুলো ৪ হাজার ৪৯৫টি অভিযোগ করেছে। আগের অর্থবছর যা ছিল ২ হাজার ৯০৮টি। ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এসটিআর সংখ্যা ৫৭টি থেকে বেড়ে ১০০টি হয়েছে। অবশ্য বীমা কোম্পানিগুলো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪টি রিপোর্ট করলেও গত অর্থবছর একটিও সন্দেহজনক রিপোর্ট করেনি।

কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দশ লাখ টাকার বেশি জমা বা উত্তোলন হলেই বিএফআইইউর গো এএমএল সফটওয়্যারের মাধ্যমে নগদ লেনদেন রিপোর্টিং বা সিটিআর করতে হয়। আর পরিমাণ যাই হোক কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলেই এসটিআর হিসেবে রিপোর্ট করতে হয়। এসটিআরের পাশাপাশি সিটিআরও বেড়েছে। গত অর্থবছর ব্যাংকগুলো ২ কোটি ৬ লাখ সিটিআর করেছে। যেখানে অর্থের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬২১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তথ্য বিনিময় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। মূলত ই-কমার্স খাতের জালিয়াতি এবং করোনাভাইরাসের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এর কারণ। গত অর্থবছর বিভিন্ন সংস্থা বিএফআইইউ থেকে এক হাজার ৪১৪টি তথ্য নিয়েছে। আগের অর্থবছর যা ছিল ৭৮৭টি।

গত অর্থবছর সর্বোচ্চ ৩৩৪টি তথ্য নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পর্যায়ক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়েছে ১৭৫টি, দুর্নীতি দমন কমিশন ১১৪টি, পুলিশের অন্যান্য বিভাগ ও ইউনিট ৪৪টি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে ৭টি। অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থা নিয়েছে বাকি ৭৪০টি তথ্য।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশের এফআইইউতে ১৯১টি তথ্য চেয়ে অনুরোধ পাঠায় বিএফআইইউ। এর আগের অর্থবছর পাঠানো হয় ১০৩টি।

গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮৮টি তথ্য পাঠানো হয় জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে গত অর্থবছর ২২টি তথ্যের বিষয়ে আবেদন এসেছে। আগের অর্থবছর যা ১৮টি ছিল। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সবোচ্চ ৩৪টি আবেদন এসেছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। বিএফআইইর কর্মকর্তারা জানান, একটি তথ্য বিনিময়ের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৫ মার্চ ২০২২

Back to top button