জাতীয়

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

আল-রাজী মাহমুদ অনিক

ঢাকা, ১২ মার্চ – দেশে করোনা ও অমিক্রনের প্রকোপ এখনও চলমান। বহাল আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি নির্দেশনাও। তারপরও দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে জনসমাগম ও মিছিল-সমাবেশ করতে দেখা যাছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই। সামাজিক দূরত্ব তো মানাই হচ্ছে না, ন্যূনতম মাস্ক ব্যবহারের প্রতিও দেখা যাচ্ছে অনীহা।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষায় রাজনৈতিক দলের নেতারা যেমন ঝুঁকির মধ্যে আছেন, ঝুঁকিতে আছেন তাদের আশেপাশের লোকজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও। করোনা অতিমারী শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের বেশ কজন সংসদ সদস্য ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাদের দ্বারা ভুল বার্তা পাচ্ছেন। সর্বসাধারণ ভাবছে দেশ থেকে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অতিমারী হয়ত উঠে গেছে। এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বললে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারছেন না বলে তারাও স্বীকার করেন। তবে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিটে সম্মেলন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্মেলন স্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা। খোদ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতারা মুখে মাস্ক ছাড়াই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। সেসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশও হচ্ছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা সবাইকে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলীয় জমায়েতে আসার নির্দেশনা দেই। তবে অনেক সময় অনেকে মাস্ক পরেন না। এমনিতেও আপনি দেখেন, এখন অনেকেই মাস্ক পরছে না। তবে আমাদের উচিৎ মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলনেও দেখা গেছে একই চিত্র। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিভিন্ন সমাবেশ ও গণজমায়েতের ছবিতে দেখা গেছে মাস্কবিহীন অবস্থায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ইশরাক হাসানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদেরকেও বিভিন্ন সমাবেশে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে মুখে মাস্কহীন অবস্থায় দেখা গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দলীয় কার্যক্রমে মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করি। সবার প্রতিই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে সবসময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর এখন যেহেতু সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে, তাই জনসাধারণও আগের মত মাস্ক পরছে না। তবে আমাদের সবারই মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ।

একই অবস্থা দেখা গেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এবং দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদেরকেও মুখে মাস্ক বিহীন অবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় কার্যক্রমে আমরা চেষ্টা করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। তবে সবসময় এটা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এদিকে স্বাস্থবিধি না মেনে অসেচতনভাবে চলাফেরায় আবারও বাড়তে পারে করোনার প্রকোপ। এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে করোনা সংক্রমণ ফের বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে। এখনও প্রায় প্রতিদিনই নতুন সংক্রমণ হাজারের ঘর অতিক্রম করছে। বুধবার সকাল আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ১৪০ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় এ হার প্রায় ৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা এখনো উঠে যায়নি। এখনো নতুন সংক্রমণ হচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ নিজের জায়গা থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সবাই সচেতন না হলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আবারও বড় সংক্রমনের মুখোমুখি হতে পারি আমরা।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ১২ মার্চ

Back to top button