রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে শেল
লন্ডন, ০৮ মার্চ – যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি শেল রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাস ক্রয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
একইভাবে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় বন্ধ ঘোষণা করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
শেল জানায়, রাশিয়া থেকে সব ধরনের অপরিশোধিত তেল কেনা শিগগিরই বন্ধ করতে যাচ্ছেন তারা। সেইসঙ্গে রাশিয়ায় তাদের সব প্রতিষ্ঠানও বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে শেল জানিয়েছিল, তারা রাশিয়ায় তাদের বিনিয়োগ বন্ধ করতে যাচ্ছে। ইউক্রেনে হামলার জেরে বিশ্বখ্যাত তেল কোম্পানিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমের অনেক দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
তবে এর জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জের ধরে রাশিয়ার তেলের ওপর পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নিষেধাজ্ঞা এলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া।
তিনি বলেন, রাশিয়ার তেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে রাশিয়া বিশ্ববাজারে বিপর্যয়কর এক পরিণতি ডেকে আনবে। প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম তখন ৩০০ মার্কিন ডলারেরও দ্বিগুণ হতে পারে।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার ওপর। সেই ধারাবাহিকতায় এবার রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ খবরের পরই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়। এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়।
রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার তেল সরবরাহ ব্যাহত হলে ইউরোপীয় বাজারে দ্রুত রাশিয়ার তেলের বিকল্প খুঁজে পাবে না কেউ। এটি (রাশিয়ার তেলের বিকল্প) খুঁজে পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে এবং খুঁজে পেলেও ইউরোপীয় ক্রেতাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুলও হবে সেই তেল। নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।
এদিকে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে আলোচনা করলেও জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস প্রথমেই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তার চাহিদার মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং মোট তেলের ৩০ শতাংশ পেয়ে থাকে শুধু রাশিয়ার কাছ থেকেই। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বা কোনো কারণে রাশিয়ার এ তেল-গ্যাস সরবরাহ বন্ধ বা ব্যাহত হলে ইউরোপের দেশগুলোর সামনে এর কোনো বিকল্প খুঁজে বের করা প্রায় অসাধ্য হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও শুরু করে রুশ বাহিনী।
যুদ্ধে দুই পক্ষেরই ব্যাপক প্রাণহানীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ছেড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। তারা প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের শহরগুলো ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার সেনা বাহিনী; হামলা চলছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/০৮ মার্চ ২০২২