অপরাধ

৭ লাখ টাকায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ভুয়া সনদ!

ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি – নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে অধিদপ্তরের জাল সার্টিফিকেট তৈরি ও আপলোড করে আন্তর্জাতিক জাহাজে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করা একটি চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান।

তদন্ত সংস্থা সিআইডি বলছে, প্রথমে ডোমেইন-হোস্টিং কিনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আদলে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয় মার্চেন্ট শিপে চাকরিতে আগ্রহী নাবিকদের বিভিন্ন যোগ্যতা সনদ প্রদান করা হবে। বিজ্ঞপ্তি দেখে নাবিকরা সনদ নিতে গেলে চক্রটি ৩-৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নাবিকদের কাছে বিভিন্ন পেশাগত নকল সনদ বিক্রি করে। এভাবে চক্রটি নকল সনদ বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

রাজধানীর উত্তরখানে ‘ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি’ নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সিরাজুল আজাদসহ এই প্রতারণা চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২টি ল্যাপটপ, ২টি এইচডিডি হার্ডডিস্ক, ২টি এসএসডি হার্ডডিস্ক, ১টি পেনড্রাইভ, ৬টি মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার বাকি আসামিরা হলেন- কথিত এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর মঞ্জুরুল আজাদ (৩২), তারিকুল আজাদ (৩০), আইটি অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩০) ও প্রাক্তন আইটি অফিসার মোহাম্মদ সোহেল রানা (২৯)।

সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে যোগ্যতা সনদ যাচাই-বাছাই ও প্রদানের কথা বলে একটি প্রতারক চক্র প্রতারণা করে আসছে অভিযোগ আসে। এসব নকল সনদের কারণে বহির্বিশ্বে মেরিটাইম ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

তিনি বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজের কর্মকর্তা, নাবিকদের যোগ্যতা সনদ পরীক্ষা ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এছাড়া অধিদপ্তর যেসব সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে, তা হচ্ছে সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) ও সার্টিফিকেট অফ কম্পিটেন্স (সিওসি)।

তিনি আরও বলেন, যোগ্যতা সনদ নামে এ প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজে কর্মরত নাবিক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সার্টিফিকেট ইস্যু করে থাকে, যা তাদের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইটে সবসময় আপলোড থাকে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের কাছ থেকে এসব সনদ নিয়ে নাবিকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিপ কোম্পানি চাকরি করতে গেলে তা সনদ নকল হিসেবে ধরা পড়ে। গ্রেপ্তারদের মধ্য সোহেল রানা দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার ও ডিজাইনার। তার মাধ্যমে সরকারি সনদের হুবহু জালিয়াতি কপি তৈরি করে চক্রটি। পরে এসব নকল সনদ তারা জাহাজে চাকরিপ্রত্যাশী নাবিকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতো।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিদের কাছ থেকে নকল ওয়েবসাইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের বিভিন্ন ডাটাবেস সার্ভারে ইন্সটল করা অবস্থায় পাওয়া যায়। যেখানে সিওপি নম্বর সম্বলিত ১২০ এর অধিক সার্টিফিকেটের তথ্য বিভিন্ন সময়ে আপলোড করা হয়েছে। এই ১২০টি সিওপি সার্টিফিকেট তারা এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ২৮ ফেব্রুয়ারি

Back to top button