ব্যক্তিত্ব

স্মার্টনেসের জন্য চাই কিছু মানসিক ব্যায়াম

আমাদের শরীরের মত মস্তিষ্কেরও প্রয়োজন ওয়ার্ক আউট। আর সেজন্য আছে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ব্যায়াম। নিউরোবিক্স একটি টার্ম, যা ব্যাখ্যা করে মানসিক ব্যায়ামের একটি সেটকে। এই ব্যায়ামগুলো মস্তিষ্ককে সচল রাখতে দারুণ ভূমিকা পালন করে, বাড়ায় বুদ্ধি, মানুষকে করে আরও স্মার্ট। আসুন জেনে নিই ব্যায়ামগুলো সম্পর্কে-

১। দাঁত ব্রাশ করুন অন্য হাতে
আপনি যে হাতে সব কাজ করে অভ্যস্ত সেই হাতে নয়, এই কাজটি করুন অনভ্যস্ত হাতে। বিজ্ঞান বলে, আপনার মস্তিষ্কের যে অংশটি কম ব্যবহার হয় সেটির ব্যবহার কর্টিকাল সারফেস এরিয়ার বৃদ্ধিকে দ্রুত এবং তাতপর্য্যপূর্ণ করে। অনভ্যস্ত হাতে দাঁত ব্রাশ করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের অব্যবহৃত অংশকে সহজেই কাজ করতে বাধ্য করতে পারেন আপনি। পেস্টের টিউব খুলতে এবং ব্রাশে লাগাতেও অনভ্যস্ত হাত ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

২। চোখ বন্ধ করে গোসল করুন
স্পর্শ আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে জাগ্রত করে। আপনার হাত দিয়ে আপনি নিজের শরীরকে অনুভব করতে পারবেন, চোখ দিয়ে যা অসম্ভব। যে নার্ভগুলো আমাদের আঙ্গুলে এসে শেষ হয়েছে তারাই আমাদের মস্তিষ্কে স্পর্শের এই চমকপ্রদ সিগ্ন্যাল পাঠায়। স্পর্শের অনুভুতিকে বাড়াতে এবং একই সাথে স্মৃতিকে আরও কর্মক্ষম করতে সহজ এই ব্যায়ামটি করুন- চোখ বন্ধ করে গোসল করুন। বাথরুমে কোন জিনিস কোথায় রেখেছেন মনে করে করে সেখান থেকে নিন, ব্যবহার করুন, আবার রাখুন। সবগুলো কাজই করুন না দেখে।

৩। সকালের অভ্যস্ত রুটিন ভাঙ্গুন
মস্তিষ্ক নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন কিছু অগোছালো কাজ করা আমাদের কর্টেক্সের পুরুত্ব বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উন্নতি করে। সকালে আপনি যা যা করে অভ্যস্ত তাতে কিছু পরিবর্তন আনুন। রোজকার হাটার জায়গা বদলান, পছন্দের টিভি চ্যানেলের বদলে অন্য কোন চ্যানেল দেখুন, প্রতিদিন যে খাবার রান্না করেন তার বদলে তৈরি করুন অন্য কিছু। হয়ত আপনি রোজ হাটতে বের হন পোষা কুকুরটি নিয়ে। আজ অন্য কোন পথে হাটুন।

৪। পরিচিত জিনিস উল্টে রাখুন
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পদ্ধতিটি কিন্তু কাজের। আপনার পরিচিত কোন ছবি বা ঘড়ি অথবা ক্যালেন্ডার উল্টে রাখুন। আমাদের ঘরের সব জিনিস যখন ঠিক যেমন থাকার কথা তেমন থাকে তখন আমাদের মস্তিষ্কের সেখানে আলাদা মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আমরা সহজেই সেই বস্তুগুলোকে এড়িয়ে যাই। কিন্তু কোন জিনিস যখন উল্টে থাকে তখন তাকে বুঝতে বেশী মনোযোগ দিতে হয়। বস্তুটিকে মস্তিষ্ক তখন আর সাধারণভাবে দেখে না, বরং তাঁর আকৃতি, গঠন ইত্যাদিও খেয়াল করে। এতে মনোযোগের ক্ষমতা বাড়ে। তাই দরকারি কোন একটা বস্তু উল্টে রাখুন আর মস্তিষ্ককে বাধ্য করুন বেশি ভাবতে।

৫। অন্য চেয়ার ব্যবহার করুন
বেশিরভাগ পরিবারে সদস্যদের জন্য বসার জন্য চেয়ার নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু অভ্যস্ত পরিবেশ মস্তিষ্ককে অলস করে। তাই যাই আপনার নিত্য অভ্যাস তাই বদলে নিন মাঝে মধ্যে। অন্য চেয়ারে বসুন। অভ্যাসের সামান্য পরিবর্তন মস্তিষ্ককে অনেকগুলো কাজ করাবে।

৬। ভিন্ন সুগন্ধ নিন
হয়ত আপনি জানেনই না, কফির সুগন্ধ ছাড়া কিভাবে একটি দিন শুরু হতে পারে! এই অভ্যাসটাও ভাঙ্গুন। নতুন সুগন্ধ যোগ করুন। বিভিন্ন ফ্লেভারের চা পান করতে পারেন। কফির সাথেও ভ্যানিলা, সিনামন বা পেপারমিন্টের মত ফ্লেভার যোগ করে দেখতে পারেন যা সাধারণত করা হয় না।

৭। যাচাই করে বাজার করুন
বাজার করতে যেয়ে নিয়মিত যা কেনেন তা কিনেই বাড়ি ফিরবেন না। ভিন্ন জিনিস খুজুন। যা কিনছেন তা যাচাই করুন। যাচাই করার জন্য পদ্ধতিগুলো জেনে নিন। তরতাজা শাকসব্জি, মাছ আপনার খাবারের স্বাদও বদলে দেবে আবার একই সাথে প্রতিদিন যাচাই বাছাই করতে মস্তিষ্ককেও কাজ করতে হবে বেশি বেশি।

৮। যোগাযোগ বাড়ান
গবেষণায় দেখা গেছে, যোগাযোগের ঘাটতি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলে কাজ করুন। মেশিনকে এড়িয়ে যান। কফির মেশিন থেকে কফি না নিয়ে দোকান থেকে দোকানদারের সাথে কথা বলে কিনুন। কার্ডে বিল না দিয়ে নগদে বিল দিন। যত বেশি সম্ভব মানুষের সাথে কথা বলুন।

৯। নতুন জায়গায় বেড়াতে যান
নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করুন। একটি জায়গাকে চেনা, জানা, সেখানকার মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া, কথা বলা, নিজের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা সব মিলিয়ে অনেকগুলো কাজ দিন নিজেকে।

অভ্যস্ত জীবন থেকে নিজেকে বের করে আনুন। অভ্যস্ততা মস্তিষ্ককে অলস করে। যত বেশী সম্ভব মস্তিষ্ককে কাজ করতে দিন, ভাবতে দিন। দিনে দিনে বাড়বে আপনার স্মার্টনেস, মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা। তৈরি হবে এক অনন্য ব্যাক্তিত্ব।

এম ইউ

Back to top button