মিলান ডার্বি জিতে সিরি-আ জমিয়ে তুললো মিলান
মৌসুমের পেরিয়ে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। শিরোপা লড়াইয়ে বেশ ভালো অবস্থানেই ছিলো সিরি-আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলান। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেই এগিয়ে ছিলো ৪ পয়েন্টে। আজকের মিলান ডার্বি জিতলেই এসি মিলানকে পেছনে ফেলে শিরোপা লড়াইয়ে জায়গাটা আরও মজবুত করার সুযোগ ছিলো সিমোনে ইনজাঘির দলের সামনে। কিন্তু হয়ে গেলো উল্টো। ২-১ গোলে ইন্টারকে হারিয়ে তাদের থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে শিরোপা লড়াইটা জমজমাট করে তুললো স্টেফানো পিওলির এসি মিলান।
অলিভিয়ের জিরুর জোড়া গোলে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টার মিলানকে হারিয়ে এসি মিলান শুধু ঐতিহ্যবাহী মিলান ডার্বিই জিতলো না, সাথে ইন্টারকে বার্তাও দিয়ে দিলো যেন এতো সহজে লিগ শিরোপা জিততে দিবে না চির শত্রুকে।
মিলান ডার্বির আগে সিরি-আর পয়েন্ট টেবিলে ২২ ম্যাচে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে ইন্টার মিলান ছিলো এক নাম্বারে। আর ২৩ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে এসি মিলান ছিলো দুইয়ে। এই ম্যাচ জিতে ২৪ ম্যাচে মিলানের পয়েন্ট এখন ৫২। আর ২৩ ম্যাচে ইন্টারের পয়েন্ট ৫৩। যদিও ইন্টার ম্যাচ খেলেছে মিলানের চেয়ে একটি কম। তবুও মাত্র ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে ইন্টারের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছে মিলান।
এসি মিলান আর ইন্টার মিলান দুই দলেরই হোম গ্রাউন্ড মিলান শহরের ঐতিহ্যবাহী সান সিরো। এই স্টেডিয়ামেই গত নভেম্বরে প্রথম লেগে মিলান স্বাগতিক হিসাবে খেলে ১-১ গোলে ড্র করেছিলো ইন্টারের সাথে। আর আজ ইন্টারের ঘরের মাঠ হিসাবে খেলতে নেমে হারিয়ে দিলো তাদের।
ম্যাচের শুরু থেকে বেশ সাদামাটা ছিলো এসি মিলান। বল দখলে এগিয়ে থেকেও মিলানের খেলায় ছিলো না কোনো পরিকল্পনা।প্রথমার্ধ্বে যেন পুরো দলটাই ছন্নছাড়া। মিলানের ছন্নছাড়া এই খেলার সুযোগ নিয়েই ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ইন্টারকে এগিয়ে নেন ইভান পেরিসিচ। সাবেক মিলান মিডফিল্ডার হাকান কালহানোগলুর কর্নারেই গোল করেন এই ক্রোয়েশিয়ান। ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় দুই দল। তখন মনেই হচ্ছিলো মিলানকে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চলেছে ইন্টার।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ্বেই পালটে গেলো সব হিসাব। দ্বিতীয়ার্ধ্বের শুরুতেও অবশ্য কেউ আঁচ করতে পারেনি কি নাটক জমিয়ে রেখেছে লাল-কালো বাহিনীরা। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটেই ইন্টারের সব পরিকল্পনা ধ্বংস করে দেয় মিলান, মিলান যেমন তেমন, একা অলিভিয়ের জিরু। মাত্র ৩ মিনিটের ভেতর জোড়া গোল করে ইন্টারকে স্তব্ধ করে দেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন করেন ইন্টারের কোচ। মাঠ থেকে তুলে নেন দারুণ খেলতে থাকা লাউতোরো মার্টিনেজ আর গোলদাতা পেরিসিচকে। এরপরেই মিলান যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে মিলান মিডফিল্ডার ব্রাহিম দিয়াজের শট ইন্টারের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ছয় গজ বক্সের বাঁ দিকে চলে গেলে সেখানে অরক্ষিত জিরু দারুণ এক স্লাইডিং শটে জালে পাঠিয়ে দেন বল। ইন্টার গোলরক্ষক সামির হান্ডানোভিচ আগেই কিছুটা সামনে এগিয়ে আসায় ফাঁকা জালেই বল জড়ায়। সমতায় ফেরে মিলান।
এর ঠিক তিন মিনিট পর ৭৮ মিনিটে জিরুর দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ২-১ গোলের লিড নেয় মিলান। ডেভিড ক্যালাব্রিয়ার ছোট পাস বাঁ পায়ের দারুণ ফ্লিকে নিজের ডান দিকে বাড়িয়ে সাথে লেগে থাকা ইন্টার ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দেন জিরু। এরপর শরীর ঘুরিয়েই বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শট। এই শটেই পরাস্ত ইন্টারে গোলরক্ষক।
ম্যাচের বাকি সময়টুকু সমতা ফেরাতে অনেক চেষ্টাই করে যায় ইন্টার। তবে তাদের কোনো চেষ্টা আর সফল হতে দেয়নি মিলান। ৯০ মিনিটের পর যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে এসে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মিলান ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজ। তবে তাতেও কোনো লাভ হয়নি ইন্টারের। শেষমেশ মিলান ডার্বির আগুনে উত্তাপ ২-১ গোলে জিতে নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্টেফানো পিওলির শিষ্যরা।
এই ম্যাচ জিতে ২৪ ম্যাচে ১৬ জয় আর সমান ৪ ড্র-হারে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে সিরি-আর পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় উঠে এলো মিলান। আর এক ম্যাচ কম খেলা ইন্টার ১৬ জয়ের বিপরীতে ৫ ড্র আর ২ হারে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে শীর্ষে।
ইন্টারের ঘাড়ে অবশ্য মিলান বাদেও নিঃশ্বাস ফেলছে আরেক দল। পয়েন্ট টেবিলের তিন নাম্বারে থাকা নাপোলির ২৩ ম্যাচে ১৫ জয় আর ৪ ড্র-হারে পয়েন্ট ৪৯। ভেনেজিয়ার সাথে পরের ম্যাচ জিতলে নাপোলির পয়েন্টও হবে ২৪ ম্যাচে ৫২। এই মুহুর্তে পা হড়কানোর সুযোগ নেই তিন দলের কারোরই। সিরি-আর ভক্ত সমর্থকরা দারু একটা উত্তেজনাকর শিরোপা লড়াই দেখতে চলেছেন এটা বলাই বাহুল্য।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০৬ ফেব্রুয়ারি