জাতীয়

আহ্বায়ক কমিটিতেই বন্দি নগর বিএনপি

ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি – কমিটি গঠনের ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই ছয় মাসে মূল কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা তো দূরের কথা বরং একটি থানা কমিটিও গঠিত হয়নি। এমনকি একটি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এজন্য নগর বিএনপির নেতারা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনকে দোষারোপ করছেন।

তারা বলছেন, নগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। তাই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া একটু দেরি হচ্ছে। তবে মহানগরের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ও পদপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বর্তমান নগর আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন।

এজন্য তারা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছেন। কারণ এই পদে থেকে তারা আগামীতে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিতে চান। তাই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ছয় মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি!

এবিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় ছয় মাস শেষ হলেও তারা এখন পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করতে পারেননি। শোনা যাচ্ছে, এই আহ্বায়ক কমিটির নেতারা নাকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ পদে থাকতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা ছয় মাসে একটি ওয়ার্ড কমিটিও গঠন করতে পারেননি তাদেরকে দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি কতটা সুফল পাবে?

গত ২ আগস্ট নগর কমিটি বিলুপ্ত করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। আবদুস সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণে ৪৯ সদস্যের এবং আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে উত্তরের ৪৭ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। আর দক্ষিণের সদস্য সচিব করা হয় রফিকুল আলম মজুনকে এবং উত্তরের আমিনুল হককে। এই দুটি কমিটি অনুমোদন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঘোষিত এই দুটি আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে ২৬টি থানা ও ৫৪টি প্রশাসনিক ওয়ার্ড এবং ২টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটির গঠিত হওয়ার পর এসব থানা ও ওয়ার্ডের একটিও কমিটি গঠন করতে পারেনি নগর উত্তর বিএনপি।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এখনো কোন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠিত হয়নি। তবে আমরা কর্মী সভা শেষ করেছি। কিছু প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবো।

কবে নাগাদ মহানগর কমিটি গঠন করা হবে- জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ওয়ার্ড ও থানাগুলোতে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচিত করবো। আর ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের পরেই মহানগর কমিটি করা হবে।

এদিকে ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উত্তরের ন্যায় দক্ষিণ বিএনপিও এসব ওয়ার্ড ও থানায় একটিও কমিটি গঠন করতে পারেনি। তবে দক্ষিণ বিএনপি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই ওয়ার্ড কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারও নেয়া হচ্ছে। আগামী ৮ থেকে ৯ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত এ সাক্ষাৎকার চলবে। এরপরে ওয়ার্ড কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে গত ২ ফেব্রয়ারি থেকে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন নগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। ৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবন মিলনায়তনে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সাংগঠনিক টিম-৬ এর অধীন গেন্ডারিয়া, কোতওয়ালী ও সূত্রাপুর থানার ওয়ার্ডগুলোর নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।

কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এটা প্রায় চূড়ান্তের পথে। যেকোন দিন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

মহানগর কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির পরে মহানগর কমিটি করা হবে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এন এইচ, ০৫ ফেব্রুয়ারি

Back to top button