জাতীয়

মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে গাজীপুরের সাফারি পার্ক

গাজীপুর, ০৫ ফেব্রুয়ারি – গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত এক মাসে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এত অল্প সময়ের মধ্যে এভাবে কোনো প্রাণী মারা যায়নি।

এভাবে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে ‘মৃত্যুপুরী’ হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

পার্ক কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের জেব্রার দল থেকে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একটি বাঘ ও সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি একটি সিংহীর মৃত্যু হয়। এভাবে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় পার্কের তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এভাবে এত প্রাণীর মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে রয়েছে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ, কুমির, ময়ূর, প্রজাপতি, দেশে বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই। এখানে রয়েছে বানর, জলহস্তী, রঙিন মাছ, কাছিমসহ প্রায় ৭০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এসব বন্যপ্রাণীর বেশির ভাগই উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এসব বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। এজন্য দায়ী কে বা কারা। তবে অভিযোগ উঠে পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তাদের দ্বন্দ্বের কারণেই একে অপরকে ফাঁসাতে হত্যা করেছে এসব বন্যপ্রাণী। এ পার্কে রয়েছে বিশাল শালবন। এছাড়া রয়েছে ফলজ ও ঔষুধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।

বন্যপ্রাণীদের অভায়ারণ্য হয়ে উঠেছে সাফারি পার্ক। তবে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক বন্যপ্রাণীদের ‘মৃত্যুপুরী’। এভাবে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহীর মৃত্যু হওয়ায় সাফারি পার্কের দর্শনার্থী দিনদিন কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে দর্শনার্থী কমেছে কয়েকগুণ।

এসব মৃত বন্যপ্রাণীদের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বিদেশে। এমন করে সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু হলে অল্প সময়ে বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে যাবে সাফারি পার্ক। এসব প্রাণীদের জন্য সরকার ব্যয় করছে লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও গাছপালা রক্ষায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

আরও জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বড় রাথুরা ও সদর উপজেলার পীরুজালী মৌজায় খণ্ড খণ্ড শালবনের ৪৯০৯.০ একর বনভূমি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৩৮১০.০ একর এলাকাকে সাফারি পার্কের মাস্টারপ্ল্যানের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয়।

পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্কে উন্নীত করার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। পরে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসনে ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি দক্ষিণ এশিয়ার মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এ পার্কে দেশি-বিদেশি বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যটকরা যানবাহনে অথবা হেঁটে এসব উপভোগ করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কের জেব্রা, বাঘ ও সিংহীর মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক যা বলার বলবেন। তবে আমার জানা মতে বর্তমানে পার্কে কোনো পশুপাখি অসুস্থ নয়।

সূত্র : নতুন সময়
এম এস, ০৫ ফেব্রুয়ারি

Back to top button