বিচিত্রতা

অর্ধসহস্রাধিক অতিথির ভুরিভোজে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে!

মহা ধুমধামে গ্রামের অর্ধসহস্রাধিক অতিথির ভুরিভোজের আয়োজন করে ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর বাজার এলাকায় বটগাছ ও পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকেই কথিত এই ‘বিয়ের’ আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আর সন্ধ্যায় শুভলগ্নে হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। চলে রাত পর্যন্ত। গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বটকে ‘বর’ ও পাকুড়কে ‘কনে’ ধরে বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন পুরোহিত শ্যামল কুমার দাস।

বর বটগাছের বাবা হয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন অম্বিকাপুর ইউনিয়নের শোভারামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী অধির ব্যানার্জি। কনে পাকুড়গাছের বাবা ছিলেন একই গ্রামের ব্যবসায়ী অরুণ সাহা।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, বটগাছ-পাকুড় গাছ একসঙ্গে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড় গাছের বিয়ের আয়োজন করে দয়ারামপুর বাজার কমিটি। এ জন্য পুরো বাজার সাজানো হয় নানা রকম লাইটিংয়ে।

বট-পাকুড় গাছের চারপাশ সকালেই গোবর মাটি দিয়ে লেপে আলতার আচর দিয়ে সাজানো হয়। বিয়েকে ঘিরে বর-কনের পাশে সাজানো হয় ছাদনাতলা।

বিয়ের হলুদ কোটা, পুকুর থেকে জল আনা, বর ও কনের বাবাকে দিয়ে করা হয় বিদ্ধি অনুষ্ঠান। নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘট। ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন।

বিকেল থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত গড়ায়। বিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতার আগমন ঘটে। খাবারের পদে ছিল পোলাও, সবজি, ডাল, ফুলকপির তরকারি, চাটনি ও মিষ্টি।

বিয়ে দেখতে আসা আরতি রানী সাহা বলেন, এই ধরনের বিয়ের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কখনোই নিজ চোখে দেখিনি। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে এই বিয়ে দেখতে এসেছি। তিনি বলেন, বট ও পাকুড়ের এই বিয়েতে কোনো মঙ্গল হবে কি না জানি না, তবে ধর্মমতে দেয়া এই বিয়েতে আমি থাকতে পেরে অনেক খুশি।

দয়ারাম বাজার কমিটির সদস্য ও বিয়ে আয়োজক কমিটির সদস্য সংকর মালো বলেন, সনাতন ধর্মমতে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেয়া হলে গ্রামবাসীর মঙ্গল হয়। শুধু তা-ই নয়, পবিত্র গীতাতেও বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। পূর্বকাল থেকেই এ ধরনের বিয়ের রীতি প্রচলন হয়ে আসছে। তাই আমাদের শ্মশানের ভেতরে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে।

অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাইদ চৌধুরী বারি বলেন, জায়গাটা আমার ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী। বিয়ের কথা শুনেছি। দাওয়াতও পেয়েছিলাম তবে সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। তবে জানতে পেরেছি অনেক ধুমধাম করে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামের যেকোন উৎসবকেই আমি স্বাগত জানাই।

এম এস, ০৪ ফেব্রুয়ারি

Back to top button