মৌলভীবাজার

মেয়ে নাস্তিক হয়ে গেছে অভিযোগ তুলে পরিবারকে একঘরে করলো মসজিদ কমিটি

মৌলভীবাজার, ০২ ফেব্রুয়ারি – আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে তাদের মেয়ে ছোট পোশাক পরে ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে, নাস্তিক হয়ে গেছে, এমনকি ভিন্নধর্মের ছেলেকে বিয়েও করেছেন-এমন সব উদ্ভট কারণ দেখিয়ে এক পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার।

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে পরিবারটি।

জানা গেছে, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল হাই চৌধুরী গুলাবের মেয়ে নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্ণা উচ্চশিক্ষার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আর এ কারণেই নাকি গ্রামে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়।

ঝর্ণা বলেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশে এসে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি, এই-সেই নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে।’

ঝর্ণা জানান, এর পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি তার বাবার বিরুদ্ধে সালিস বৈঠক ডাকেন।

তিনি বলেন, ‘অতি উৎসাহী কিছু মানুষ স্থানীয় মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। বিচারে না যাওয়ায় আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে। এ খবর পেয়ে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়াকে জিজ্ঞেস করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জবাবে তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তা ছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমাদের এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক আমিন মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ ঘটনার পর আজ মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।

এর আগে ইউএনও বলেছিলেন, সামাজিকভাবে ওই পরিবারকে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয় তার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তিনি মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এ ছাড়া ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও জানিয়েছেন।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ০২ ফেব্রুয়ারি

Back to top button