অপরাধ

২৩৮ কোটি টাকা লোপাটে এসবি গ্রুপের ছলচাতুরী

দুলাল হোসেন

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি – এসবি এক্সিম বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহজাহান বাবলু। ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প এলাকায় তাদের কোনো টাইলস কারখানা নেই। অথচ সেই কথিত কারখানায় উৎপাদিত টাইলস বিদেশে রপ্তানির নামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। এরপর কাগজপত্র জাল করে ৭২টি এলসির বিপরীতে ২৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। পরে ওই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়।

অন্যদিকে কোনো পণ্য উৎপাদন না করেই তা রপ্তানির নামে বিদেশি ৫টি শেল ব্যাংকের মাধ্যমে ৮৭ কোটি দেশে আনা হয়। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলে তার সাজসজ্জার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ টাকা পাচার করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কমার্স ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও সমপরিমাণ অর্থপাচার করে এসবি এক্সিম। সিআইডি ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তদন্তে নামে। প্রাথমিক তদন্তে ২৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য-উপাত্ত পেয়ে এসবি গ্রæপের মালিক শাহজাহান বাবলুসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করে।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা করেন, যা তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই চার্জশিট দেওয়া হবে। মামলায় এসবি গ্রæপের দুই কর্মকর্তা কমার্শিয়াল ম্যানেজার ইউসুফ হোসেন রোবেল ও কমার্শিয়াল অফিসার ইমরান মীর, দুবাইয়ে অবস্থানরত ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিন স্বপন ও কার্গো ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিকের ম্যানেজার সৈয়দ অহিদুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

সিআইডির তথ্যমতে, মামলার পর সিআইডির এসআই নাফিজকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্ত পর্যায়ে মামলার প্রধান আসামি শাহজাহান বাবলু ও অহিদুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। বাবলু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে আছেন। অন্যরা কারাগারে আছেন। আর স্বপন দুবাইয়ে।

সিআইডির তদন্তে জানা যায়, শাহজাহান বাবলু ২০০৮ সালে পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবসা করতেন। ঝিনাইদহে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে ৩টি মামলা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি পাড়ি জমান রাজধানীতে। ঢাকায় এসে মাতুয়াইলে এসবি এক্সিমের নামে অফিস চালু করেন। আর প্রতিষ্ঠানের কারখানা দেখানো হয় ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প এলাকায়।

সিআইডির তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে শাহজাহান বাবলু রপ্তানির নামে ওই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটান। সূত্র বলছে, শাহজাহান বাবলু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশি পাঁচটি (আরব আমিরাতে তিনটি ও সিঙ্গাপুরে দুটি) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য টাকাপাচার করেছেন।

সিআইডির তদন্ত সূত্র জানায়, শাহজাহান বাবলু ২৩৮ কোটি ৭৪ লাখ আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসা কিছু টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ায় তার কাছে বর্তমানে কমার্স ব্যাংকের পাওনা ১৯০ কোটি টাকা। ওই টাকার বিপরীতে মাতুয়াইলে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ জমি, কদমতলীতে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার জমি, ধানমন্ডিতে আড়াই হাজার বর্গফুটের প্রায় চার কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট, তিনটি জিপ, একটি মাইক্রোবাস, দুটি প্রাইভেটকার থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এইচ, ৩১ জানুয়ারি

Back to top button