শ্রমিক লীগকে সতর্ক করলো আওয়ামী লীগ
ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি – অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্র। এরপরই সংগঠনের দুই নেতা যুক্ত বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে ‘ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা’ করার কথা বলেছে।
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে ফজলুল হককে সভাপতি এবং কেএম আযম খসরুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মন্টু মারা গেলে সভাপতির পদটি শূন্য হওয়ায় জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নূর কুতুব আলম মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। তবে শুরু থেকেই সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার মাঝে চলে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।
শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভক্তি সর্বশেষ প্রকাশ্যে আসে ২২ জানুয়ারি। সেদিন শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাদের একটি অংশ বৈঠক করেন। সেখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। তাকে জানানোও হয়নি। বৈঠকে সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে এই দায়িত্ব দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই খবর সংগঠনের বিভিন্ন নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দেন।
২২ জানুয়ারি না জানিয়ে বৈঠক করায় এবং তাকে সরিয়ে আরেকজনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক আযম খসরু শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির চারজনকে বহিষ্কার করেন। বুধবার গণমমাধ্যমে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এতে বলা হয়, গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কার করা অপর ৩জন হলেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম জাফর এবং দপ্তর সম্পাদক ফজলুল হক।
সংগঠনের এমন পরিস্থিতিতে শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: নূর কুতুব আলম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে এম আযম খসরু উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে জাতীয় শ্রমিক লীগের বিরাজমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রমিক লীগ নেতাদের সতর্ক করার পাশাপাশি ঐক্যভদ্ধভাবে সংগঠন পরিচালনা করার নির্দেশ দেন।
বৈঠকের পর জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে সারা বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক লীগের সকল নেতাকর্মীদের সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং বাংলাদেশ বিরোধী একটি চিহ্নিত মহলের দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর শ্রমিক, মজদুর ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীন বাংলাদেশে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে জাতীয় শ্রমিক লীগ। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ১৯তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারির শুরু থেকে শ্রমিক লীগ শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবিকা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। সংগঠনের দুই প্রধান নেতা জনাব ফজলুল হক মন্টু এবং মোল্লা আবুল কালাম আজাদ এর মৃত্যুজনিত কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় কিছুটা জটিলতার এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত কতিপয় সংবাদের কারণে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ সকল বিভ্রান্তি ও সাংগঠনিক জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের মাধ্যমে সকল ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তির অবসান হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শ্রমিক লীগে কোন বিভেদ বা কোন্দল নেই। একই সাথে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সকল বিভেদ-অনৈক্য ভুলে গিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
বিবৃতিতে জাতীয় শ্রমিক লীগের ভাবমূর্তি ও সংগঠনের একতা-সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে এ ধরনের সকল কর্মকাও থেকে বিরত থাকার জন্য সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক নির্দেশনাও দেয়া হয়।
সূত্র : রাইজিংবিডি
এন এইচ, ৩১ জানুয়ারি