আইন-আদালত

যা ইচ্ছা তাই করবেন মেনে নেওয়া যায় না : তদন্ত কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি – রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনা তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এসময় আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, আপনারা (তদন্ত কর্মকর্তা) যা ইচ্ছা তাই করবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

এর আগে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর শামীম আক্তারকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিতে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাইকোর্ট তার ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে পুনরায় লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

ব্যাখ্যায় শামীম আক্তার বলেন, মামলার বাদীর কাছে প্রথমে এজাহার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি তা দেননি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

কিন্তু তার এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি হাইকোর্ট। পুনরায় ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেননি আদালত।

শুনানিতে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যা ইচ্ছে তাই করবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনাকে বলা হয়েছিল হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত শেষ করতে। কিন্তু সেটিও করেননি।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। আর তদন্ত কর্মকর্তার (আইওর) পক্ষে মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১০ জুনে নিখোঁজ হন পুঠিয়ার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নির্বাচনের ফলকে কেন্দ্র করে তিনি হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু সেই এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে ওই থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ ছিঁড়ে ফেলেন। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেরাই একটা এজাহার লিখেন। যা পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

এর আগে মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবুর জামিন শুনানিতে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) তলব করেন।

এ মামলার তদন্তের জন্য ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে আদেশ অনুসারে পিবিআই তদন্ত শুরু করে। এরমধ্যে মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবু হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

জামিন শুনানিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশে মামলার কেস ডকেট নিয়ে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর আবুল কালাম আবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বিচারিক আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।

এর আগে নুরুল ইসলামের মেয়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ৩১ জানুয়ারি

Back to top button