জাতীয়

করোনা আক্রান্ত হলে আইসোলেশন ১০ দিন

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি – করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনের থাকার সময়সীমা বেধে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার ১০ দিন পর্যন্ত রোগীকে আইসোলশনে থাকতে হবে। এরপর অফিস- আদালতে যেতে আগের মত আরটি-পিসিআর সনদের দরকার হবে না।

তবে সরকারি, বেসরকারি অফিস,শিল্প কারখানাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সনদ গ্রহণ করতে হবে নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের।

করোনা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে রোগীদের ক্ষেত্রে আইসোলেশনের সময়সীমা ছিল ১৪ দিন। গত ২৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সেই সময়সীমা কমিয়ে আনার কথা জানান। তিনি জানান, আইসোলেশনের সময়সীমা ১০ দিনের পরিবর্তে ৫ থেকে ৭ দিন করা হবে।

সারাদেশে করোনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেই সময়সীমা নতুন করে নির্ধারণ করে দিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৮৩ জনের।এ নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৩৬৩ জনে। আর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮২ জনে।

রোববার সকালে রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএসে সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের কারণে দেশে সংক্রমণ বেড়েছে ২০ গুণ আর মৃত্যু বেড়েছে চার গুণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় নতুন একটি ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওমিক্রনের অন্য উপসর্গ কী আছে, তা বের করতে কাজ চলছে।

ওমিক্রন সংক্রমণকে যেন কোনোভাবেই ‘হালকা’ হিসেবে দেখা না হয় তার অনুরোধ জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল।

তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রকোপ শুরু হলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো কম। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষে ও জানুয়ারির শুরুর দিকে যখন ওমিক্রন এলো, তখন মৃতের সংখ্যা ২০ গুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। তাই ওমিক্রন বা নতুন কোনো ধরনকে হালকভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের প্রাদুর্ভাব চলার মধ্যেই আরও একটি নতুন ধরন শনাক্তের কথা বলছেন চীনা গবেষকেরা। এর নাম দেওয়া হয়েছে নিওকোভ। উহানের গবেষকেরা করোনাভাইরাসের নতুন ওই ধরন শনাক্ত করেছেন। গবেষক দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, নিওকোভ ধরনটি এখন পর্যন্ত মানুষকে আক্রান্ত করেনি।

তারা বলছেন, আপাতত এ ভাইরাস দক্ষিণ আফ্রিকায় বাদুড়ের শরীরে ছড়ালেও ভবিষ্যতে তা মানুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

তবে শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, নিওকোভ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

করোনাভাইরাসে লক্ষণ, উপসর্গ যেমন-হাঁচি, কাশি,মাথা ব্যথা, অবসন্নতা বা ঠাণ্ডা লেগে গলা ভেঙ্গে গেছে বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে- এমন সব উপসর্গ থাকলেও দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে হবে। যাদের দীর্ঘমেয়াদী রোগ আছে তাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারে।

স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। গত শনিবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৬ কোটিরও বেশি মানুষ।

স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়েছে,স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ কোটি ৩৮ লাখ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ১৯ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন।

অধ্যাপক নাজমুল বলেন, দুটি ডোজের টিকা নেওয়ার পরেও যাদের করোনা পজিটিভ হয়েছে, তারা সেরে উঠার ৬ সপ্তাহ পরে বুস্টার ডোজের টিকা পাবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যারা হাসপাতালে এসেছেন, তাদের ৮৫ ভাগ রোগীই একটি ডোজের টিকাও নেননি।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাই টিকাদান কর্মসূচি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত জোরদার করছে।

বাংলাদেশে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়। ঠিক দুই মাস পর গত বছরের ৮ এপ্রিল থেকে। আর গত ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, যারা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছেন, এবং যারা বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন, তাদের করোনাভাইরাসের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছিল শুরুতে।

পরে ১৭ জানুয়ারি সেই বয়সসীমা কমিয়ে ৫০ বছর করা হয়। আর রোববার থেকে তা আরও কমিয়ে ৪০ বছর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

যে আগে যে হাসপাতাল থেকে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, সেই হাসপাতাল থেকে তার মোবাইলে বুস্টার ডোজের তারিখ জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। সেই কেন্দ্রে নির্ধারিত দিনে গিয়ে তৃতীয় ডোজ নিতে হচ্ছে। পাশাপাশি ১২ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/৩০ জানুয়ারি ২০২২

Back to top button