ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি – আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগে বিশৃঙ্খলা চরমে। দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন সংগঠনটির দুই শীর্ষ নেতা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও ছিল তাদের আলাদা কর্মসূচি। গত ২৫ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একে অন্যকে বহিষ্কার করে পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম খসরু সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির চারজনকে বহিষ্কার করেন। অন্যদিকে খসরুকে বহিষ্কার করেন মান্নান। তবে মান্নানের দাবি তিনি বহিষ্কার করেননি, বহিষ্কারের এই খবর কীভাবে ছড়িয়ে গেল তা জানেন না তিনি। এদিকে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম খসরুকে বহিস্কার করা হয়েছে এমন খবরে ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন আচরণে বিব্রত সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সংগঠনের একজন সহ-সভাপতি বলেন, ২০১৯ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথকভাবে রাজনীতি করছেন। এর পর থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমও করেননি সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা। সংগঠনের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থের দিকেই তারা বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে আজম খসরু বলেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান আমাকে সংগঠন থেকে অপসারণ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। আমাকে অপসারণ বা বহিষ্কারের কোনো এখতিয়ার তার (মান্নানের) নেই। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সম্পর্কে খসরু বলেন, তিনি (মান্নান) শ্রমিক লীগের কোনো কার্যক্রমে থাকেন না। শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু মারা যাওয়ার পর নুর কুতুব আলম মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু তার পর থেকে তিনি সব নিয়ম লঙ্ঘন করে ‘ভাই লীগ’ করায় ব্যস্ত। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে বহিষ্কার করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে আজম
খসরু বলেন, তিনি (মান্নান) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নন। আমাদের সংগঠনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলে কোনো পদের অস্তিত্ব নেই। তাকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তার জায়গা থেকে তিনি আমাকে অপসারণ বা বহিষ্কার করতে পারেন কিনা তাকে আগে জিজ্ঞেস করেন। এক পর্যায়ে খসরু বলেন, আমি সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, সুতরাং আমি তাকে বহিষ্কার করার যোগ্যতা রাখি।
আজম খসরু একক স্বাক্ষরে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যকলাপের অপরাধে ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম জাফর ও দপ্তর সম্পাদক ফজলুল হককে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করেন।
আজম খসরুকে বহিষ্কারের বিষয়ে শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান বলেন, এটা চিলে কান নেওয়ার মতো ঘটনা। আমি তাকে (খসরুকে) বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখি না। কাউকে বহিষ্কারের ক্ষমতা রাখি না। তিনি কীভাবে এই খবর পেলেন, কীভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে গেল আমি জানি না।
মান্নান আরও বলেন, শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টুর জীবদ্দশাতেও সংগঠনটিতে এই বিভক্তি ছিল। খসরু কোনো প্রোগ্রামে যেতেন না। মন্টু মারা যাওয়ার পর আমি সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আছি। খসরু সাহেব এখনো কোনো প্রোগ্রামে আসেন না।
সূত্র : আমাদের সময়
এম এস, ২৭ জানুয়ারি